সমুদ্রে পণ্য পরিবহন খরচ কমেছে ৮০ শতাংশের বেশি, সুফল নেই বাজারে

২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কনটেইনারে আমদানি পণ্য বোঝাই করে চীনের বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে এখন ভাড়া লাগছে ৩৪ হাজার টাকা। করোনা মহামারির সময় ২০২১ সালেও এই কনটেইনার আনতে ভাড়া লাগত প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক মন্দার প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে চাহিদা কমায় পণ্য পরিবহন কমে গেছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম থেকে আমেরিকা, চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপ এবং চীন থেকে চট্টগ্রাম—সব রুটেই পণ্য পরিবহন ভাড়ায় ব্যাপক ধস নেমেছে।

সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে খরচ কমতে কমতে একেবারে স্বাভাবিক সময়ের অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনা মহামারি ঘিরে পণ্যভর্তি একটি কনটেইনারের পণ্য পরিবহন ভাড়া যেখানে সাড়ে ১০ হাজার ডলারে পৌঁছেছিল; একই রুটে সেই ভাড়া কমে এক হাজার ৭০০ ডলারে নেমেছে। অর্থাৎ ২০১৯ সালের স্বাভাবিক সময়ে পণ্য পরিবহনে যে ভাড়া ছিল, এখনকার ভাড়া তার চেয়েও খানিকটা কম। কিন্তু বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি ও বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি—কোনো ক্ষেত্রেই এর সুফল মেলেনি।

সমুদ্রপথে জাহাজভাড়া এবং কনটেইনার ভাড়া এত কমে আসার পরও পণ্যের দামের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।
জানা গেছে, বাংলাদেশে পণ্য আমদানির বড় উৎস হচ্ছে চীন। উদাহরণ হিসেবে চট্টগ্রাম-চীন রুটে সুমদ্রপথে একটি ২০ ফুট দীর্ঘ আমদানি কনটেইনার আনতে ভাড়া দিতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ ডলার। করোনা মহামারির সময় ২০২১ সালে এই ভাড়া পাঁচ হাজার ডলারে পৌঁছেছিল।

আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা। সেই রুটেও ভাড়া কমে একেবারেই স্বাভাবিক। চট্টগ্রাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের সমুদ্রবন্দর নিউ ইয়র্কে একটি ৪০ ফুট কনটেইনারে পণ্য পাঠাতে এখন খরচ পড়ছে দুই থেকে আড়াই হাজার মার্কিন ডলার। আগে খরচ পড়ত আট হাজার মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে একটি কনটেইনার পাঠাতে খরচ হতো ২০ হাজার মার্কিন ডলার।

আর চট্টগ্রাম থেকে পশ্চিম উপকূলের বন্দর লস অ্যাঞ্জেলেসে ৪০ ফুট কনটেইনারে পণ্য পৌঁছানোর খরচ পড়ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার। ফ্রেইটস ডটকমের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে পণ্য পরিবহন খরচ কমেছে ৮৮ শতাংশ। এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে খরচ কমেছে ৮৭ শতাংশ এবং এশিয়া থেকে ইউরোপের উত্তর উপকূলে খরচ কমেছে ৮৮ শতাংশ।

সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ভাড়া কমার কথা স্বীকার করে সাইফ মেরিটাইম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ জহীর বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পণ্যের চাহিদা কমেছে। এ জন্য রপ্তানিও কমেছে। আর বিশ্বজুড়ে পণ্য পরিবহন এখন ‘গো স্লো’ যাচ্ছে। প্রচুর অর্ডার না থাকায় পণ্যবাহী জাহাজ এবং কনটেইনারের চাহিদাও কমেছে বিশ্বজুড়ে। এর ফলে বাধ্য হয়েই সব রুটেই ভাড়া কমেছে।

তিনি মনে করছেন, ২০২৩ সালের পুরো বছরটি এভাবেই থাকবে। ফলে পণ্য আনতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে না ব্যবসায়ীদের।

চট্টগ্রাম-চীন রুটে বর্তমানে সরাসরি পাঁচটি শিপিং লাইনের সপ্তাহে ছয়টি জাহাজ পণ্য পরিবহন করছে। এ লাইনগুলোই ২০২১ সালে চীন থেকে চট্টগ্রামে আনতে ২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারের ভাড়া নিয়েছিল পাঁচ হাজার ডলার। কয়েক মাস ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে জাহাজজটের কারণে এই ভাড়া সাত হাজার ডলারও নিয়েছিল। এখন সেই ভাড়া নিচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ মার্কিন ডলার।

জাহাজের মেইন লাইন অপারেটর বলছেন, “চট্টগ্রাম-চীন রুটের জাহাজগুলো যদি নিজেদের না হয়ে ভাড়ায় চালাতে হতো, তাহলে ব্যবসা তো লাটে উঠত। নিজেদের জাহাজ বলেই কোনোমতে টিকে রয়েছি। কারণ এই জাহাজ তো আমি বসিয়ে রাখতে পারব না। সে জন্যই ‘যা পাই’ এমন ভাড়ায় সার্ভিস সচল রাখতে হচ্ছে।” তিনি আরো বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে পণ্য আমদানিকারকরা জাহাজ ভাড়া একটু বাড়লেই চারদিকে হৈচৈ ফেলে দেন। রপ্তানিকারকরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। কিন্তু এখন ভাড়া কমতে কমতে যে ধস নেমেছে তার সুফল কোনো পণ্যেই নেই।’

জানতে চাইলে অ্যাগ্রো কমোডিটি ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রেজাউল করিম আজাদ বলেন, ‘শিপিং খরচ কমল, এটা ঠিক। কিন্তু বিপরীতে যে বুকিং আকাশ ছুঁয়েছে, আর ডলার সংকট এবং ঋণপত্র সংকট তো রয়েই গেছে। তাহলে এর সুফল মিলবে কিভাবে? পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় প্রথমেই বুকিং দরের ভিত্তিতে। শিপিং ভাড়াও প্রভাব ফেলে; কিন্তু সেটি দামে প্রভাব কম।’

সূত্র: দৈনিক কালেরকণ্ঠ

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , , , , ,

সব সংবাদ

For add

oceantimesbd.com