চট্টগ্রাম সাগরপাড়ে ইলিশের হাট

৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার পর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৎস্যজীবীরা এক সময় হাঁপিয়ে উঠেছিল। সেই বিপর্যয় কেটে এখন চট্টগ্রামের আনোয়ারার সমুদ্র উপকূল রায়পুর ইউনিয়নের গহিরার সাগর চরে প্রতিদিন বসছে ইলিশের হাট। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিদিন সাগরে নামছে অগণিত মাছ ধরার নৌকা-ট্রলার, আর মাছ ভর্তি করে ঘাটে ফিরলেই ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠে সাগর উপকূল। বাজারে ইলিশের দামও বেশি। ইলিশ ধরাকে কেন্দ্র করে উপকূলের কয়েক হাজার জেলের কর্মসংস্থানও হয়েছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে না বলে জানা যায়।

সরেজমিন আনোয়ারার গহিরা সাগর চরে ইলিশ ঘাটে দেখা যায়, সাগর থেকে মাছ নিয়ে আসা নৌকা-বোটগুলোকে ঘিরে ধরছে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা। জেলেরা মাছ প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মাছ নিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম শহরসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার হাটবাজারে।

আনোয়ারা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৩ হাজার ৫৮৯ জন নিবন্ধিত ও আরও হাজার খানেক অনিবন্ধিত মৎস্যজীবী রয়েছে। তাদের মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি মৎস্যজীবী সাগরে ইলিশ মাছ ধরে থাকেন। উপজেলার উপকূলীয় রায়পুর ইউনিয়নের বারআউলিয়া, উঠানমাঝির ঘাট, দোভাষীর ঘাট, বাঁচা মাঝির ঘাট, ফকিরহাট (ঘাটকূল), খুইল্যা মিয়া ঘাট, পরুয়াপাড়া, গলাকাটার ঘাট, পারকি বাজার ঘাট ও জুইঁদন্ডী লামার বাজার, সাপমারা খালের মুখ এলাকায় প্রতিদিন ইলিশ মাছের হাট বসে। এর মধ্যে গহিরা উঠান মাঝির ঘাটে সব চেয়ে বড় ইলিশের হাট বসে। এ ঘাটে এখন চলছে ইলিশ উৎসব। ভোরে ও গভীর রাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা ছাড়াও শখের বসে অনেকেই আসেন মাছ ক্রয় করতে। তবে বাজারের তুলনায় এখানে দাম একটু কম বলেও জানান তারা।

গহিরা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি নাছির উদ্দিন জানান, সাগরের জোঁ নিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার নৌকা ও বোট ইলিশ নিয়ে উপকূলে ফিরে। সকাল, দুপুর, বিকাল ও রাতে এসব মাছ ধরার নৌকা মাছ নিয়ে আসে। এ সময় পাইকারি ব্যবসায়ীরা ট্রাক নিয়ে মাছ সংগ্রহ করে। এ ছাড়া অনেকেই খুচরা ইলিশ কিনতে এখানে আসে।

তিনি আরও জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কয়েকদিন আগে সাগরে বেশ কয়েকটি মাছধরার ট্রলার ডুবি ও জেলে নিখোঁজ হয়েছিল। জেলেদের অনেক পরিবার এখনো সরকারি সহযোগিতা পায়নি।
তবে ক্রেতারা জানান, উপকূলের ঘাটে ট্রলার ভর্তি করে মাছ নিয়ে জেলেরা ফিরলেও দাম যেন কমছে না। উপকূল ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজারে ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দেড় কেজি বা তার চেয়ে ওজনে বড় ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। অথচ বিগত সময়ে এ সাইজের মাছের দাম এখনকার অর্ধেকে ছিল।

স্থানীয় আড়তদার মহিউদ্দিন বলেন, ‘এক থেকে দেড় কেজি বা তার বড় সাইজের মাছগুলো ৪০ থেকে ৫০ হাজার এবং এর থেকে ছোট সাইজের মাছগুলো ১৭ থেকে ১৪ আর ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি হচ্ছে।’

মাছ কিনতে আসা মো. সোহেল নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে ইলিশের দাম বেশি, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।

উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হক বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় জেলেদের জালে বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে মাছের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , , ,

সব সংবাদ

For add

oceantimesbd.com