তিস্তায় খাল খনন করছে পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশে পানি সংকটের শঙ্কা

তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ প্রায় ১ হাজার একর পরিমাণ জমির মালিকানা পেয়েছে। গত শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন জমির মালিকানা হস্তান্তর করেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পদক্ষেপের আওতায় জলপাইগুড়ি ও কোচ বিহার এলাকার আরও অনেক কৃষিজমি সেচের আওতায় আসবে। তবে নতুন খাল খননের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে ক্ষুব্ধ করবে। এতে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ কম পানি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুক্রবার জলপাইগুড়ির জেলা প্রশাসন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে সেচ বিভাগকে জমির মালিকানা হস্তান্তর করে। এ জমির মাধ্যমে তিস্তার পূর্ব তীরে দুটি খাল তৈরি করতে পারবে প্রশাসন। জলপাইগুড়ি জেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া আরেক নদী জলঢাকার পানিপ্রবাহও খালের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।

পশ্চিমবঙ্গ সেচ বিভাগের এক সূত্রের বরাতে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তা এবং জলঢাকার পানি টানার জন্য কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল খনন করা হবে। আরেকটি খালের দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার। এটি তিস্তার বাম পাশের তীরবর্তী এলাকায় খনন করা হবে।

প্রশাসনিক সূত্র বলছে, খালটি খনন করা হলে প্রায় এক লাখ কৃষক সেচসুবিধার আওতায় আসবেন। ব্যারাজটি জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় অবস্থিত।

উত্তরবঙ্গে ৯ লাখ ২২ হাজার হেক্টর কৃষিজমিকে সেচের আওতায় আনতে ১৯৭৫ সালে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পটি শুরু হয়। এর আওতায় খালের মাধ্যমে তিস্তার পানি নদীর দুই পাড়ের এলাকার কৃষিজমিতে সরবরাহের পরিকল্পনা হয়। ওই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া অন্য নদীগুলো থেকে খালে পানি সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়। তবে কয়েক দশক ধরেই প্রকল্পটি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমানে মাত্র ১ লাখ হেক্টরের মতো কৃষিজমিতে পানি পৌঁছাতে পারে।

গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘খাল খননের জন্য জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন আমাদের কাছে ১ হাজার একর জমি হস্তান্তর করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার একে জাতীয় প্রকল্প (২০০৯ সালে) ঘোষণা করলেও তহবিল দিচ্ছে না। তবে তহবিল না পেলেও আমরা ধাপে ধাপে কাজ (খালের নেটওয়ার্ক তৈরি) শেষ করার চেষ্টা করব।’

পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি এলাকায় আরও একটি খাল সংস্কার করবে। সূত্র বলছে, এ খালটি সংস্কার করা হলে ৩২ হাজার একর জমি সেচসুবিধা পাবে।

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ বছর পর তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে এ খাল খননের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে ক্ষুব্ধ করবে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে নয়া দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি আজও সম্ভব হয়নি।

ভারতের এক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, তিস্তা প্রকল্পের আওতায় নতুন খাল খননের মধ্য দিয়ে মমতা প্রমাণ করতে চাইছেন উত্তর বঙ্গের জন্য তিস্তা নদীর পানি প্রয়োজন।

শিলিগুড়ির নর্থ বেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘এখন তাঁর (মমতা) সরকার সেচ নেটওয়ার্কের আওতা বাড়াচ্ছে। এ কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, নতুন খালের মধ্য দিয়ে তিস্তা নদী থেকে আরও বেশি পানি সরিয়ে নেওয়া হবে। এর মানে, শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ আরও কম পানি পাবে।’

সূত্র বলছে, গ্রীষ্মকালে তিস্তায় প্রায় ১০০ ঘনমিটার প্রতি সেকেন্ড পানিপ্রবাহ থাকে। ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের কৃষিজমিতে সেচের জন্য প্রায় ১ হাজার ৬০০ ঘন মিটার প্রতি সেকেন্ড পানিপ্রবাহের প্রয়োজন হয়।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , ,

oceantimesbd.com