পানিতে ডুবে গেলে কী করবেন?

বাংলাদেশে পানিতে ডুবে বিভিন্ন বয়সের মানুষের মৃত্যু একটি নিত্যদিনের ঘটনা। তার মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায় শিশু মৃত্যু।

আর কিছু দিন পরই আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর, এই ঈদ যাত্রায় শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে পানিতে ডুবে শিশু বা বিভিন্ন বয়সের মানুষের মৃত্যু ঘটে বেশি। এটি এক ধরনের বৈষম্য। এ বৈষম্য কেবল পানির উৎস বা প্রাপ্তিকেন্দ্রিক নয়। এটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থানের সুযোগসহ আরো অনেক বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে পুকুর, ডোবা, খালবিল ও নদীনালার সংখ্যা বেশি, যা এ বৈষম্যকে ত্বরান্বিত করেছে।

বাংলাদেশে স্থানভেদে দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজ, নদীপথে যাতায়াত, পেশা হিসেবে জেলেদের পানির সঙ্গে সখ্য অনিবার্য। স্বভাবতই শিশুরা তাদের বাবামাকে অনুসরণ করে। এভাবেই কর্মব্যস্ত বাবামায়ের দৃষ্টির আড়ালে পানিতে ডুবে অকালে প্রাণ হারায় কোমলমতি শিশুরা।

গবেষণাই দেখা যায়, পানিতে ডুবে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩০টি শিশু মারা যায়। এসব মৃত্যুর ৮০ শতাংশই বাড়ি থেকে ২০ মিটারের মধ্যে ঘটে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয় পুকুর, ডোবা ও বালতির পানিতে। শিশুদের একটু দেখভাল করে রাখাসহ তিন কৌশলে এসব মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, শিশুদের সাঁতার শেখানো, অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানে এলাকাভিত্তিক দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন এবং গ্রামে মায়েরা গৃহস্থালি কাজে ব্যস্ত থাকার সময় শিশুদের নজরে রেখে পানিতে ডোবা প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া।

তবে, শিক্ষার সঙ্গে সচেতনতার বিষয়টি অনস্বীবার্য। কোনো শিশুকে পানি থেকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হাসপাতাল পর্যন্ত নেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে শুরু হয় কুসংস্কারের অনুশীলন। শিশুকে মাথায় নিয়ে নাচা, দৌড়ানো, গায়ে ছাই মেখে ঢেকে রাখা, আরো কত কী কর্মকাণ্ড চলে! এভাবে শিশুর মৃত্যুকে করুণভাবে নিশ্চিত করা হয় কেবল অজ্ঞতার কারণে। অথচ সামান্য তথ্য জ্ঞাপন ও প্রশিক্ষণ মানুষকে সচেতন করতে পারে। এতে বেঁচে যেতে পারে সম্ভাবনাময় অনেক শিশুর প্রাণ।

এটি কোনো জটিল বিষয় নয়। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে একাডেমিক শিক্ষারও তেমন প্রয়োজন নেই। কেউ পানিতে ডুবে যেতে থাকলে তাকে উদ্ধার করতে হবে পেছন দিক থেকে। নয়তো ডুবন্ত ব্যক্তি তাকে জাপটে ধরে ফেলতে পারে যাতে উভয়ের প্রাণনাশের আশঙ্কা সর্বাধিক। যদি উদ্ধারকারী ব্যক্তি সাঁতার না জানেন, তাহলে একটি লাঠি বা রশি হয়তো দুজনকেই বাঁচাতে পারে। দরকার শুধু সামান্য প্রশিক্ষণের। দরকার উদ্ধার কৌশল জানার।

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮-এর তথ্য অনুযায়ী, এক-পাঁচ বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে ৫৮শতাংশের মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। এটি বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ, যা সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। উন্নত অনেক দেশ ইতিমধ্যে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags:

oceantimesbd.com