বাজার নিতে প্লাস্টিক জমিয়ে রাখছেন সেন্টমার্টিনবাসী

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়েই ব্যাগভর্তি বাজার পাচ্ছেন বাসিন্দারা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলেছ। প্লাস্টিক না ফেলে বরণ জমিয়ে রাখছেন সেন্টমার্টিনবাসী।

গত বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে সেন্টমার্টিনে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর থেকে দ্বিতীয়বারের মতো নিত্যপণ্য বিতরণ করা হয়েছে।

বিতরণ করা পণ্যের মধ্যে আছে- চাল, মসুরের ডাল, তেল, মুরগি, ডিম, আলু, পেঁয়াজ, আটা, সুজি, নুডলস, কম্বল, শীতের জামা, লুঙ্গি, চিনি, লবণ, টি শার্ট, জুতা, সবজি, লাইফ জ্যাকেট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্লাস্টিক দূষণ কমাতে একদল স্বেচ্ছাসেবী ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ উদ্যোগের আওতায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থাপন করা হয়েছে ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’। যেখানে মানুষ তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের খালি পাত্র বা বোতল এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, এ উদ্যোগ স্থানীয়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি, কমবে পরিবেশ দূষণ। প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর প্রতি মাসে দুইবার করে চালু থাকছে। পক্ষকাল পর্যন্ত জমানো প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ করে প্রয়োজন মতো নিত্যপণ্য নিতে পারছেন এখানকার বাসিন্দারা।

উপকারভোগী সাবেকুন নাহার (৪৫) বলেন, ‘প্লাস্টিক দিয়ে যে চাল ডাল তেল কিনতে পারবো তা স্বপ্নেও ভাবিনি। এখন আমি প্লাস্টিক ফেলে না দিয়ে সংরক্ষণ করি। পাশাপাশি সৈকতে পর্যটকদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকও সংগ্রহ করি।’

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, সংগৃহীত প্লাস্টিক দ্বীপ থেকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে রিসাইকেল করা হয়। প্লাস্টিকের একটি অংশ দিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবীরা কক্সবাজারে তৈরি করেছেন বিশাল আকৃতির একটি প্লাস্টিক দানব।

এটি এশিয়ার সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় দানব স্ট্যাচু। এ দানব তৈরির মাধ্যমেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন মানব সমাজকে বার্তা দিয়েছে, প্লাস্টিকের ফলে পরিবেশ যে হারে দূষিত হচ্ছে তা ধীরে ধীরে দানবে রূপ নিচ্ছে। আর এ দানবই পরবর্তীতে মানবসমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

তিনি আরও বলেন, প্রথমবার নিত্যপণ্য পেয়ে সবার আগ্রহ বাড়ায় এবারও বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বিনিময় হয়েছে। পরে পরিমাপ করে এর ওজন সম্পর্কে জানাতে পারবো।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সেন্টমার্টিনসহ অন্য দ্বীপ ও সমুদ্রসৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরও মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে সেটি পুরোপুরি সফলতা আসছে না। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি তাদের সম্পৃক্ত করে যে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশা করছি এ উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা হবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সংস্থাটি প্রতিনিয়ত সমাজকল্যাণ মূলক বিভিন্ন কাজে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। এমনই একটি উদ্যোগ সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশ দূষণরোধে প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর স্থাপন। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে এ প্রকল্প।

সূত্র: জাগোনিউজ২৪.কম

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com