ভিজুয়াল পলিউশন

চোখ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় বছরে চক্ষু রোগে আক্রান্ত ২ লক্ষ ৭০ হাজার শিশু

ভিজুয়াল পলিউশনের কারণে চোখ এবং মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা শহরে প্রায় দুই লক্ষ সত্তর হাজার শিশু চক্ষু রোগে এবং মাথাব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছে। সম্প্রতি এসডোর “ভিজ্যুয়াল পলিউশন ইন দ্যা সিটি অফ ঢাকা: অ্যা পাবলিক হেলথ, এনভাইয়রনমেন্ট, অ্যান্ড ট্রাফিক ডিসট্রাকশন” গবেষণা ফলাফলে এই তথ্যটি উঠে এসেছে।

এই রিপোর্টটি রবিবার(১২ ফেব্রুয়ারি) এসডোর কার্যালয়ে একটি মিডিয়া ব্রিফিং এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

এসডোর এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ভিজুয়াল পলিউশনের কারণে ২৪% মানুষ চোখের সমস্যায় ভুগছে যার মধ্যে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকা শহরের ২৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি বছর ঢাকা শহরের প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার শিশু চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং গুরুতর মাথাব্যথার জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করে। এছাড়াও, ঢাকা শহরের বাসিন্দা যারা মানসিক সমস্যায়, তাদের সংখ্যা প্রায় ১৭ শতাংশে পৌঁছেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিজুয়াল পলিউশনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৪০% হারে বেড়েছে। যেখানে ২০১৯ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫,২২৭ জন, যা বেড়ে ২০২২ সালে হয়েছে ৮,৮০০ জন। ভিজুয়াল পলিউশনকে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ওভারটেকিং, বেপরোয়া ও মাতাল হয়ে গাড়ি চালানো। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ভিজ্যুয়াল পলিউশন সম্পর্কে জনসচেনতার হার খুবই কম। প্রায় ৯৫% নগরবাসী এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।

বিলবোর্ড, তারযুক্ত বিদ্যুতের খুঁটি এবং বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্ক, কুয়াশা, গ্রাফিটি, ইত্যাদি ভিজুয়াল পলিউশনের উদাহরণ এবং যা জনগনের সৌন্দর্য উপভোগে বাধা দেয়। ভিজুয়াল পলিউশনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মানবসৃষ্ট আবাসভূমি নষ্ট হওয়ার কারণে বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে নগরবাসী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।

এসডোর চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ভিজ্যুয়াল পলিউশন বিষয়টি ধাপে ধাপে মোকাবিলা করতে হবে। তিনি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে ভিজ্যুয়াল পলিউশন থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সৈয়দ মোর্শেদ বলেন, ভিজ্যুয়াল পলিউশনের ঝুঁকি কমাতে আমাদের অবশ্যই এই সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এ সম্পর্কে বোঝাতে হবে।

গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে এসডোর মহাসচিব এবং স্টাডি টিম লিডার ড. শাহরিয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ভিজুয়াল পলিউশনের কারনগুলোর মধ্যে রয়েছে বিলবোর্ড, তার ও বিদ্যুতের খুঁটি, কুয়াশা, অতিরিক্ত ট্রাফিক সাইন, আবর্জনা বা আবর্জনার স্তূপ, শহুরে গ্রাফিটি, অতিরিক্ত আলো বা নিয়ন সাইন দূষণ এবং ডিজিটাল বিলবোর্ড ইত্যাদি। প্লাস্টিকের ব্যাগ ও আবর্জনা এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে যা সাধারণ জনগণের পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচয়স্বরূপ।

‘এসডো’র মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ভিজুয়াল পলিউশনের পরিণতি সুদূরপ্রসারী। এর মধ্যে রয়েছে মানসিক বিভ্রান্তি ও অবসাদ, মতামত প্রকাশের ক্ষমতা হ্রাস, পরিচয়হীনতা, রাস্তায় যানজট, বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি, মানসিক অস্থিরতা ও অসুস্থতা, চোখের সমস্যা, নান্দনিকতা বোধ হ্রাস, কমিউনিটির সামগ্রিক ক্ষতি ইত্যাদি। যে শিশুরা শৈশব থেকেই ভিজুয়্যাল পলিউশনের সংস্পর্শে এসেছে, তারা প্রায়ই অপ্রীতিকর পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, এবং তাদের স্বাভাবিক আবেগ হারিয়ে যাচ্ছে।

এই গবেষণার প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেছেন এসডোর প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট মালিহা হক। অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল এডভাইজার ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন-বিএসটিআই-এর কেমিক্যাল বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল হাসেম।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com