সানজানা তাসফিয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : ২১ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার, ২২:০৮:৫৭
বিশাল এ বিশ্বে রহস্যের শেষ নেই। ঠিক তেমনি শেষ নেই সমুদ্রের রহস্যেরও। তবে এত রহস্যের ভিড়ে সমুদ্রের মাত্র ৫-৭ ভাগ রহস্য আমাদের জানা, বাকি সবই অজানা।
সামুদ্রিক জীব-বৈচিত্র্য এবং মাছের প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে অনেক জায়গায়; কিন্তু কিছু কিছু স্থানকে সামুদ্রিক প্রাণীরা তাদের প্রিয় প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেয়। ঠিক তেমনি এক প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে এই আমাদের বাংলাদেশের বুকে।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অবস্থিত এ এক অপার বিস্ময়কর প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র। যা বঙ্গোপসাগরের ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ নামে পরিচিত।
১৮৬৩ সালে বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ নিয়ে ভারত থেকে ইংল্যান্ড যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হয় গ্যাডফ্লাই নামের একটি জাহাজ। যার ওজন ছিল ২১২টন।
এই জাহাজকে খুঁজতে গিয়েই আবিষ্কার হয় তলবিহীন ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড।’ এর কোনো তলা নেই বলে স্থানীয় জেলেদের কাছে এটি ‘নাইবাম’ নামে পরিচিত।
আজ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার বছর আগে প্লাইস্টোসিন যুগে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সমুদ্রের নিচে সৃষ্টি হয় অন্তত ১১টি বিশাল খাত। তারই একটি হলো সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। এটি সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গভীরতম এই উপত্যকার রেকর্ডকৃত আয়তন প্রায় ১৩৪০মিটার এবং এর গড় গভীরতা প্রায় ১২০০ মিটার।
মূলত মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এর মতোই তলা হারিয়ে তৈরি হয়েছে এই খাদ। সাগরতলে ১৭৩৮ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে থাকা এ খাদটি আয়তনে প্রায় ৬টি ঢাকা মেট্রোপলিটনের সমান। বাংলাদেশের উচ্চতম পর্বত তাজিংডং (১২৮০মিটার) এর চেয়েও খানিকটা বেশি গভীরতা রয়েছে এ খাদটির।
এ খাদটি বিলুপ্তপ্রায় অনেক প্রাণীর অবাধ বিচরণক্ষেত্র এবং প্রজননকেন্দ্র। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড -এ ৫ প্রজাতির তিমি ও ৮ প্রজাতির ডলফিনের প্রজনন কেন্দ্র।
মূলত প্লাইস্টসিন যুগ থেকে বিকশিত প্রাচীন সামুদ্রিক এ বাস্তুতন্ত্র ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ বর্তমানে হয়ে উঠেছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের বিশ্বসেরা হটস্পট গুলোর একটি।
পুরো বিশ্বে একমাত্র এ খাতটিতে একসাথে ডলফিন, তিমি ও পরপয়েজ পাওয়া যায়। তাছাড়া ও এখানে রয়েছে হাতুড়ি মাথার হাঙ্গর, বুবী সিগাল, সবচেয়ে বড় ইরাবতী ডলফিন, অক্টোপাসসহ অনেক জানা অজানা প্রাণীর বাসস্থান।
‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ বর্তমানে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত এলাকা। ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর এটি প্রতিষ্ঠিত হয় সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে। ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮০০ হেক্টর (৪,২৯,০০০ একর) জায়গা নিয়ে এ বৈচিত্র্যময় সংরক্ষিত এলাকাটি গঠিত।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আর বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ একটি সম্ভাবনার উৎস হলেও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গবেষণার সীমাবদ্ধতার ও অনগ্রসরতার কারণে এ খাতটির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত যেকোনো পদক্ষেপই বাংলাদেশকে এনে দিতে পারে এক নতুন সম্ভাবনা।
সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।
Tags: বঙ্গোপসাগর, সোয়াস অব নো গ্রাউন্ড
For add