জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ ও বাংলাদেশ

জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সংকট। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যেমনঃ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদীভাঙন এবং জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা প্রভৃতির কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ জলবায়ু পরিবর্তন দেশের কৃষি, অবকাঠামো ও জীবনযাত্রার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন “কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস” (কপ-২৮) এর এইবারের আসর গত ৩০ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে উদ্বোধন করা হয়।

বাংলাদেশ থেকে এইবার ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। এছাড়াও এবারের জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত হয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক ও পরিবেশবীদগণ, ব্যবসায়িক ও আর্থিক নেতা, তরুণ আইনজীবী, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জলবায়ু কর্মীদের প্রতিনিধি, আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ।

কপ ২৮ সম্মেলন এই বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্মেলন। এবারের এই সম্মেলনে বরাবরের মতো এই করভেনশনে স্বাক্ষর করা ১৯৮টি দেশের শীর্ষ নেতারা একত্র হয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব গুলোকে মোকাবেলা করতে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেয়ার উদ্দেশ্যে কথা বলবেন। জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই কনভেনশনের অংশ হিসেবে বরাবরই এই সম্মেলনে মিলিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল, সম্মেলনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আলোচনায়, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের অগ্রভাগে থাকা বাংলাদেশ, স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির সাথে একসাথে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এই বছরের জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। জলবায়ু সম্মেলনের আগে ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এ বছর বাংলাদেশের আলোচ্যসূচিতে থাকা পাঁচটি মূল বিষয় তুলে ধরেন। মন্ত্রী বলেন, কপ২৮ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চলতি বছরের সম্মেলনে বাংলাদেশ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

বৈশ্বিক স্টকঃ বাংলাদেশের এজেন্ডার প্রথম ইস্যুটি ‘প্রথম বৈশ্বিক স্টকটেক’ সম্পর্কিত যা এই বছরের জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বৈশ্বিক মজুদ হল দেশ এবং অংশীদারদের জন্য একটি প্রক্রিয়া যেখানে তারা প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তির লক্ষ্য পূরণের দিকে সম্মিলিতভাবে কোথায় অগ্রগতি করছে-এবং কোথায় নেই তা দেখার জন্য। বাংলাদেশ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কার্যক্রমের অগ্রগতির মূল্যায়ন, ভবিষ্যতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বৈশ্বিক মজুদ থেকে কংক্রিট মাইলফলক সহ স্পষ্ট পদক্ষেপ চায়।

লস এন্ড ড্যামেজ তহবিলঃ লস এন্ড ড্যামেজ শব্দটি বোঝায় যে দেশগুলি, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলি জলবায়ু সঙ্কটের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে-তারা যে ক্ষতি এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘ এটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেঃ “জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে উদ্ভূত ক্ষতি ও ক্ষতির মধ্যে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, সমুদ্রের অ্যাসিডিফিকেশন, হিমবাহ পশ্চাদপসরণ এবং সম্পর্কিত প্রভাব, লবণাক্ততা, ভূমি ও বন অবক্ষয়, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং মরুকরণের মতো ধীর গতির ঘটনাগুলিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।”

অভিযোজনে বৈশ্বিক লক্ষ্যঃ গ্লোবাল গোল অন অ্যাডাপটেশন প্যারিস চুক্তির ৭.১ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি যার লক্ষ্য “বিশ্বের অভিযোজিত ক্ষমতা বৃদ্ধি, স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাস করা”। জিজিএ-র উদ্দেশ্য হল একটি ঐক্যবদ্ধ কাঠামো হিসাবে কাজ করা যা প্রশমনের মতো একই মাত্রায় অভিযোজনের জন্য রাজনৈতিক পদক্ষেপ এবং অর্থ পরিচালনা করতে পারে। এ বছরের জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ ‘বৈশ্বিক অভিযোজন লক্ষ্য’-এর কাঠামো তৈরি ও প্রণয়নে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য দেশগুলির পাশাপাশি, বাংলাদেশ সদস্য দেশগুলিকে তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি)-তে বর্ণিত ২০৩০ সালের প্রশমন লক্ষ্যগুলি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য করতে এবং এলডিসি দেশগুলিতে তহবিল বাড়ানোর জন্য জোর দেবে।

জলবায়ু অর্থায়নে ১০০ বিলিয়ন ডলারঃ ঢাকার আলোচ্যসূচির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জলবায়ু অর্থায়ন। জাতিসংঘের মতে, জলবায়ু অর্থায়ন বলতে স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তঃদেশীয় অর্থায়নকে বোঝায়-সরকারী, বেসরকারী এবং অর্থায়নের বিকল্প উত্স থেকে নেওয়া-যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করবে এমন প্রশমন এবং অভিযোজন পদক্ষেপকে সমর্থন করতে চায়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর মতে, বাংলাদেশ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলির জন্য উন্নত দেশগুলির কাছ থেকে জলবায়ু অর্থায়নে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে। এছাড়াও, জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে।

অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করাঃ এই বছরের জলবায়ু সম্মেলনের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা হল অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করা। অভিযোজন তহবিল উন্নয়নশীল দেশগুলির দুর্বল সম্প্রদায়গুলিকে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে এমন প্রকল্প এবং কর্মসূচিকে অর্থায়ন করে। দেশের চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং অগ্রাধিকারের উপর ভিত্তি করে উদ্যোগ নেওয়া হয়। মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের মতে, চলতি বছরের সম্মেলনে অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয়তার প্রতিধ্বনি করবে বাংলাদেশ। ২০২৫ সালের পর জলবায়ু অর্থায়নের সুবিধার্থে ‘নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল অন ক্লাইমেট ফাইন্যান্স “শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনেও ঢাকা কাজ করবে। দেশটি এই বছর জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০) চালু করার লক্ষ্য নিয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে দেশের বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামত নিয়ে ইতিমধ্যে একটি অবস্থানপত্র তৈরি করা হয়েছে।

কপ২৮ এর প্রথম দিনই লস এন্ড ড্যামেজ তহবিলের বিষয়ে একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধনী দিন ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলির উদ্ধার ও ত্রাণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে লস এন্ড ড্যামেজ এর তহবিল আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মত হয় এবং গৃহীত হয়। প্রথমে বিশ্বব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি তহবিল গঠন করা হবে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অর্থ বিতরণ করতে সক্ষম হবে এবং ধনী শিল্পোন্নত দেশ, উদীয়মান অর্থনীতি এবং জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ যেমন চীন, উপসাগরীয় দেশ এবং কপ২৮ আয়োজক দেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত দ্বারা অর্থায়ন করা হবে।  এর মধ্যে আরব আমিরাত থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার, জার্মানি থেকে আরও ১০০ মিলিয়ন ডলার, ব্রিটেন থেকে কমপক্ষে ৫১ মিলিয়ন ডলার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৭.৫ মিলিয়ন ডলার এবং জাপান থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সম্মেলনের প্রথম দিন এর সভাপতি সুলতান আল জাবের এর বক্তব্যে, জীবাশ্ম জ্বালানি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানী সম্পর্কিত ভাষা অন্তর্ভুক্ত করার ধারণা সম্পর্কে দৃঢ় মতামত ছিল এবং সকলকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। আল জাবের উল্লেখ করেছেন যে অনেক জাতীয় তেল কোম্পানি ২০৫০ সালের জন্য নেট-শূন্য লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে। জাবের বলেন, আমি কৃতজ্ঞ যে তারা এই খেলা পরিবর্তনকারী যাত্রায় যোগ দিতে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু, আমাকে অবশ্যই বলতে হবে, এটি যথেষ্ট নয়, এবং আমি জানি যে তারা আরও বেশি কিছু করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প বিশ্বব্যাপী উত্তাপের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত সীমার মধ্যে রেখে জ্বালানোর চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণে তেল, গ্যাস এবং কয়লা উৎপাদন করার পরিকল্পনা করেছে। এবং সবচেয়ে বড় নেট-জিরো বস্টিং পরিকল্পনা সহ সংস্থাটি হল সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় তেল জায়ান্ট অ্যাডনক, যার সিইও হলেন আল জাবের নিজেই।

কপ-২৮ জলবায়ু সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মানবতার ইতিহাসে ২০২৩ সালই হতে চলেছে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে ঊষ্ণ বছর। ২০২৩ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে চলার রেকর্ড ‘বিশ্ব নেতাদের মেরুদণ্ডে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া উচিত। বিশ্ব নেতাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কাজ করার জন্য মিনতি করে গুতেরেস বলেন, আমরা জলবায়ু ভেঙে পড়ার বাস্তব চিত্র চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।

খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস, যিনি অসুস্থতার কারণে কপ২৮ সফর বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেনঃ কপ২৮-এ অংশগ্রহণকারীরা এমন কৌশলবিদ হতে পারে যারা নির্দিষ্ট দেশ বা ব্যবসায়ের স্বার্থান্বেষী স্বার্থের পরিবর্তে সাধারণ ভাল এবং তাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যতের দিকে মনোনিবেশ করে। তারা যেন রাজনীতির আভিজাত্য প্রদর্শন করে, লজ্জার নয়।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে, বিশ্ব নেতারা খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের বিষয়ে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, এটি প্রথম কপ রেজোলিউশন। টেকসই কৃষি, রেজিলিয়েন্ট ফুড সিস্টেম এবং ক্লাইমেট অ্যাকশান বিষয়ে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে ১৩৪ দেশ। দেশ গুলো তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (NDC) এবং ২০২৫ সালে কপ৩০ দ্বারা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় খাদ্য ও জমির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই রেজোলিউশন বাংলাদেশ ও সাক্ষর করেছে বিশ্বব্যাপী, খাদ্য ব্যবস্থা সমস্ত গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী, যার সিংহভাগই আসে শিল্পোন্নত কৃষি, বিশেষ করে পশুসম্পদ এবং সার থেকে। জলবায়ু সংকট ইতিমধ্যেই কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে, কারণ চরম আবহাওয়ার ঘটনা যেমন বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ এবং দাবানল – এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং মরুকরণের মতো ধীর গতির প্রভাব – বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্বালানির উচ্চ মূল্য এবং খাদ্যের ঘাটতি।

জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা সমর্থিত গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এশিয়া ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার হিসেবে ভূষিত করেছেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় মন্ত্রী এবং কপ২৮ উচ্চ পর্যায়ের সেগমেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. হাছান মাহ্‌মুদ, এমপি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন। কপ২৮ সম্মেলন একটি নতুন গবেষণা পত্রের ফলাফল উঠে এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানী বাবহারের ফলে জলবায়ু জরুরি অবস্থার তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান দেওয়া হয়। অ্যাডভান্সেস ইন অ্যাটমোস্ফিয়ারিক সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় এটি উল্লেখ করেছে যে এশিয়ার বৃহৎ অংশ এবং আমেরিকা মহাদেশের বেশিরভাগ অংশ একটি ব্যতিক্রমী উষ্ণ শীত অনুভব করতে পারে এবং এটি ৯৫% সম্ভাবনা দেয় যে ২০২৩-২০২৪ শীতের জন্য বিশ্বব্যাপী গড় পৃষ্ঠের তাপমাত্রা একটি নতুন ঐতিহাসিক রেকর্ড স্থাপন করবে।

জার্মান ওয়াচের তথ্যমতে, বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত যেটি আমাদের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক তথ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিগত বছরগুলো থেকে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেমন ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টি, বন্যার প্রকোপ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সাইক্লোনের মাত্রা ও তীব্রতা বৃদ্ধি, অকাল খরা ইত্যাদি। তবে উপকূলীয় অঞ্চলের একটি প্রধান সমস্যা হলো মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের বিরূপ আচরণের প্রভাবে এই লবণাক্ততা দিন দিন অনেক বেড়ে যাচ্ছে এবং ফলে সেখানে সুপেয় পানির অভাব, খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি, মানুষের বাস্তুচ্যুতি, কাজের অভাব ইত্যাদি আরও প্রকট হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘন ঘন সাইক্লোন ও বন্যার জন্য আমরা বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছি, যা পরবর্তী সময়ে মারাত্মক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন জ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জলবায়ু ব্যবস্থাপনায় প্রতি বছর প্রায় ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বার্ষিক বাজেট থেকে খরচ করছে। অথচ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে বছরে মাত্র এক বিলিয়ন ডলারের মতো সহযোগিতা আসছে। সেক্ষেত্রে, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কয়েকগুণ বেশি অর্থের প্রয়োজন, যে পরিমাণ অর্থ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে পাওয়ার জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যে উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছে তা অর্জন করার জন্য আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কাজ করতে হবে।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। ইমেইলঃ kamrul_sub@hotmail.com

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , , ,

oceantimesbd.com