সুনীল অর্থনীতি উন্নয়ন প্রকল্পে গতি ফিরছে

পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস হলো সমুদ্র। তাই দেশে দেশে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণসহ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন করে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। গড়ে তোলা হয় সমুদ্রকেন্দ্রিক সুনীল অর্থনীতি।

এমন একটি সমৃদ্ধ সুনীল অর্থনীতি গড়ার চেষ্টায় রয়েছে বাংলাদেশও। সেই ধারাবাহিকতায় মৎস্য সম্পদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। নাম দেওয়া হয় ‘সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা’।

তবে কাজ শুরুর পর থেকেই নানা জটিলতার মুখে পড়ে পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প। ফলে বাস্তবায়নের গতি ছিল খুবই ধীর। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ বছরে এসে হলেও সে জটিলতা কাটতে শুরু করেছে। এতে গতি পেতে শুরু করেছে খুঁড়িয়ে চলা সুনীল অর্থনীতি গড়ার এ প্রকল্প।

প্রকল্পটির উদ্দেশ্য, সুনীল অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখতে বিজ্ঞানভিত্তিক স্টক অ্যাসেসমেন্ট ও ম্যানেজমেন্টের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা বাড়ানো, মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে মনিটরিং সিস্টেমের প্রবর্তন, চিংড়ি চাষিদের সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা সংস্থার সামর্থ্য বাড়িয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক টেকসই মৎস্য মজুত সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, বাণিজ্যিক ও ক্ষুদ্রায়তন মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে অধিকতর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বাস্তবায়ন ও উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, সার্ভিস সেন্টার, মৎস্য বাজার উন্নয়ন, আহরিত ও উৎপাদিত মৎস্যের গুণগতমান উন্নয়ন ও অপচয় কমানো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ নামে একটি প্রকল্প নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের জুনে প্রকল্প শেষের কথা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে তা শেষ হচ্ছে না। তাই এরই মধ্যে বাস্তবায়ন মেয়াদ এবং ব্যয় বাড়ানোর জন্য প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করে সংস্থাটি। সার্বিক বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন। এরই প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি গতকাল অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়, সময়মতো কাজ শুরু করতে জটিলতা, অর্থছাড়ে বিলম্ব, ব্যাংক হিসাব খোলা নিয়ে জটিলতা এবং করোনার কারণে দীর্ঘ সময় কাজ বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এজন্য প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রকল্পের জন্য ২৪০ মিলিয়ন ডলারে চুক্তি হয়। তবে মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে ১৮৭ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন ডলার ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যায়। অব্যবহৃত ৫২ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার প্রকল্পে ব্যবহার করতে ডিপিপি সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংশোধনী প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৮-২৩ সাল মেয়াদি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ১ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা এবং সরকারের বরাদ্দ ২৮০ কোটি টাকা। সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর এবং ৫৮৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ৫ বছরের প্রকল্পের মেয়াদ গিয়ে দাঁড়াবে ৭ বছরে। আর মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ৪৫৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ ছাড় হয়েছে ৩০ শতাংশ। খরচ হয়েছে ২৬ বা ২৭ শতাংশ অর্থ। মোট ৩৫ শতাংশ অর্থ খরচ হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক কালবেলাকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির অব্যবহৃত ৫২ মিলিয়ন ডলার তখন পরিকল্পনা কমিশন বাদ দিতে বলেছিল; কিন্তু চুক্তির টাকা ফেলে রেখে লাভ নেই। মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে সেটিকে বরং কাজে লাগানোই ভালো। ডিপিপির বাইরে থাকা ৫২ মিলিয়ন অর্থ যোগ করাতেই মূলত সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা প্রয়োজন। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারের চকোরিয়ার চিংড়ি এস্টেট ব্যাপক ক্ষতি হয়, পরে আর কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। ওটার উন্নয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে চিংড়ি রপ্তানি বাড়াতে মেরিন ফিশারিজের ক্যাপাসিটি বাড়ানোর কাজ করতে হবে।

কাজ শুরুতে দেরি ও মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সব কাজ মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। ৩৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। প্রকল্প শুরুর পর করোনার জন্য আমদানির ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল। এ ছাড়া শুরুতে অংশীজনের সঙ্গে ব্যাংক হিসাব খোলা নিয়েও কিছু জটিলতা ছিল। পাশাপাশি প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে দেরি হয়েছিল।

তিনি বলেন, বড় কাজগুলো প্রায় শেষের দিকে। পেমেন্টগুলো বাকি রয়েছে। মেয়াদ না থাকায় টেন্ডার করাও সম্ভব হচ্ছে না। সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত টেন্ডারে যাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য ২ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষ করার জন্য সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছিল।

এ প্রকল্পের আওতায় দেশের উপকূলীয় ৪ বিভাগের ১৬ জেলার ৭৫টি উপজেলার ৭৫০টি ইউনিয়ন নির্বাচন করা হয়েছে। মূলত দেশের ৭১০ কিলোমিটার বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে হুমকির সম্মুখীন জেলাগুলোর অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলাগুলোকেই প্রকল্প এলাকা হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com