IOCINDIO’তে বাংলাদেশের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি নিয়ে যা বলছেন সমুদ্র বিজ্ঞানীরা


ঢাকায় শুরু হয়েছে ইউনেস্কোর ইন্টারগভর্নমেন্টাল ওশনোগ্রাফিক কমিশনের (IOC) ভারত মহাসাগর বিষয়ক আন্তসরকারী আঞ্চলিক কমিটির (IOCINDIO) নবম অধিবেশন। তিন দিনব্যাপী এই অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন ভারত মহাসাগর উপকূলের ১৯টি দেশের সমুদ্র সংক্রান্ত সরকারি দফতরের প্রতিনিধি ও সমুদ্র বিজ্ঞানীরা।

গত ২ বছর ধরে এই কমিটির সভাপতিত্ব করছে বাংলাদেশ। সেই ধারাবাহিকতায় অধিবেশনের আয়োজকও হয়েছে বাংলাদেশ। এ কারণেই ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সমুদ্র বিষয়ক আঞ্চলিক এই শীর্ষ সম্মেলন। যার সভাপতিত্ব করছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশিদ আলম।

তিনদিনের এই সম্মেলনে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর করা এই অঞ্চলের সমুদ্র বিষয়ক নানান গবেষণা তথ্য বিনিময়, অভিজ্ঞতা আদান প্রদান, নেটওয়ার্কিং, তরুণদের সম্পৃক্ত করণ এবং গবেষণা জোরদার করার নানান প্রতিবন্ধকতা দূর করার বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এই অধিবেশন থেকে ভারত মহাসাগর বিষয়ক আন্তসরকারী আঞ্চলিক কমিটিকে সরাসরি ইউনিস্কোর একটি সাব কমিটিতে রূপ দেওয়ার প্রস্তাবনার বিষয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া আইওসিআইএনডিআইও-এর পরবর্তী ২ বছরের জন্য নেতৃত্ব নির্বাচনও হবে এই অধিবেশন সমাপ্তির আগে।

আয়োজক দেশ হিসেবে তিনদিনের এই অধিবেশন বাংলাদেশের কেন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং এই অধিবেশনে বাংলাদেশের লাভ ক্ষতি কি দেশের সমুদ্র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছে ওশান টাইমস।

এ বিষয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুস সাকিব খান ওশান টাইমসকে বলেন, বর্তমানে দেশের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওশানোগ্রাফি বিভাগ চালু রয়েছে। ব্লু ইকোনমিতে আমরা যারা স্টেকহোল্ডার আছি তাদের ভূমিকাটা কী, তারা কিভাবে ব্লু ইকোনমিতে ভূমিকা রাখতে পারবে সেজন্য তাদেরকে একত্রিত করা এবং ব্লু ইকোনমি এক্সপার্ট যারা, যারা সমুদ্র বিষয়ে জ্ঞান রাখে, যারা এ নিয়ে আলোচনা ও কাজ করেন তাদের সমন্বয়ে একটি ফোরাম তৈরি করা যেখানে সবাই যার যার অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করবে। বিশ্বজুড়ে প্রচুর আলোচনায় আসছে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু আসলে হচ্ছে কি না? আমরা বলছি মাইক্রোপ্লাস্টিকে সমুদ্র দূষিত হচ্ছে, আসলে কি হচ্ছে কিনা? এসব বিষয়ে এ অঞ্চলে যারা কাজ বা গবেষণা করেন তারা সেইসহ তথ্যপ্রমাণ নিয়ে এসেছেন। আমরাও এখানে আমাদের কথাগুলো শেয়ার করার জায়গা পেয়েছি। এই প্ল্যাটফর্মটি আমাদের এইসব অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এই আয়োজনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কারণ এই প্ল্যাটফর্ম তারা করে দিয়েছে বলেই এখান থেকে আমাদের দেশের তরুণ গবেষকরা সমৃদ্ধ হতে পারছেন।

ছবি: নাজমুস সাকিব খান, ড. এ কে এম আজম চৌধুরী ও অধ্যাপক ড. মো. মোসলেম উদ্দিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. কে এম আজম চৌধুরী বলেন, সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ান ওশান যেখানে বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ আছে। এই দেশগুলোর আঞ্চলিক সংযোগের একটি মাধ্যম এই আইওসিআইএনডিআইও। এর মাধ্যমে সামুদ্রিক নানান সমস্যা (যেমন: সি লেভেল রাইজ, মৎস্য শিকার, দুর্যোগ এবং অর্থনীতি সম্পর্কৃত) নানান বিষয়ে একসাথে কাজ করা। এই অঞ্চলের দেশগুলো যেন কমন ইস্যুতে আরও ভাইব্রেন্ট হয় এবং এর মাধ্যমে সমুদ্রের যথাযথ ব্যবহার যেন নিশ্চিত করা যায় এটাই এই কমিটির কাজ।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সবগুলো মহাসাগর ইউনিস্কোর সাব কমিশন হয়ে গেলেও এটা এখনো সাব কমিশনের মর্যাদা পায়নি। এটা কমিটি আকারে আছে। এটি যদি কমিশন হয় তাহলে আমরা এর মাধ্যমে আঞ্চলিকভাবে গবেষণাসহ বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবো। যেটা এখন এককভাবে করতে গিয়ে আমরা নানান সংকটে পারছি না। এছাড়া এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিচিতিতো হবেই, আমাদের সম্ভাবনাগুলোও তুলে ধরা যাবে। এর মাধ্যমে আমরা যে ব্লু ইকোনমিতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি সেটা আরও তরান্বিত হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং আইওসিআইএনডিআইও-এর সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোসলেম উদ্দিন মুন্না বলেন, মূলত আইওসিআইএনডিআইও এর উদ্দেশ্য দুইটি। এক হলো সক্ষমতা বৃদ্ধি অপরটি হলো সচেতনতা বৃদ্ধি। বর্তমান বিশ্বের যে যাত্রা সেখানে আমাদের উন্নয়নের একমাত্র পথ বাকি আছে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাওয়া। কারণ আমরা ইতোমধ্যে ভূমির পুরোটুকুই ব্যবহার করে ফেলেছি। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের দিকে উন্নয়ন যাত্রায় আমরা আজও সে পর্যায়ে যেতে পারিনি। এখনো আমরা সমুদ্রের ৪০ মিটারের বাইরে গিয়ে মাছ ধরার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারিনি। সুতারাং বাংলাদেশ এই যোগ্যতা অর্জনে আইওসিআইএনডিআইও-কে কাজে লাগাতে পারে।

তিনি বলেন, যদি এটি ইউনিস্কোর সাব কমিশনে রূপ পায় আর এখানে যদি বাংলাদেশ একটিভ রোল প্লে করতে পারে তাহলে ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়া এদের যে প্রযুক্তিগত যোগ্যতা আছে সেটা বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা যদি বঙ্গোপসাগরের টোটাল সম্পদ ও শক্তির সম্ভাবনা আছে সেটাকে যদি আমরা এক্সপ্লোর এবং এক্সেস করতে পারি তাহলে সেটাকে আমরা আমাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবো। আমি মনে করি এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি বাংলাদেশ একটিবভাবে রোল প্লে করে সেই আউটপুটটা নিতে পারে।

বাংলাদেশ এই কমিটির সভাপতির পদে থাকায় এটি বেশি সম্ভব এবং পরবর্তী কমিটিতেও এই অবস্থান ধরে রাখা গেলে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান আইওসিআইএনডিআইও-এর সাবেক এই শীর্ষ নেতা।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: ,

oceantimesbd.com