জলবায়ু পরিবর্তনে সামুদ্রিক মাছের বিপদ

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চারদিক থেকে বিপদের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। সমুদ্রের মাছও বিপদমুক্ত নয়। আমরা দেখছি, মেরু অঞ্চলে বড় বড় বরফের স্তর ধসে পড়ছে। এই বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে। ফলে শুধু বাংলাদেশই নয়, আমেরিকা, ইউরোপের উপকূলের অনেক দেশ ও অঞ্চলের বেশ কিছু অংশ সমুদ্রের পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই প্রক্রিয়া এখনই শুরু হয়ে গেছে। এ তো গেল একধরনের বিপদ। কিন্তু এর ফলে যে সমুদ্রের মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবনও ঝুঁকিতে পড়ছে, সেটা খুব বেশি আলোচনায় আসেনি।

সম্প্রতি সায়েন্টিফিক আমেরিকান পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। মাছ হুমকির মুখে পড়েছে।

কারণ, অক্সিজেন ছাড়া তো প্রাণ বিপন্ন হবেই। ইতিমধ্যেই অনেক প্রজাতির মাছ প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের সন্ধানে মহাসাগরের এক এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে ছোট আকারের মাছ নতুন পরিবেশে অপরিচিত ভয়ংকর ধরনের বড় বড় মাছের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এককথায় আমরা বলতে পারি, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়ে বেশ কিছু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে।

প্রশ্ন হলো, উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রের পানির অক্সিজেন কেন কমবে? এই দুই ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক কী? দুটি কারণে সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা যাচ্ছে। প্রথমত, পানি যত উষ্ণতর হবে, সে তত তার ভেতর দ্রবীভূত গ্যাস হারাবে।

যেমন দেখা যায়, কার্বোনেটেড (কার্বন মিশ্রিত) পানীয়র শিশির মুখ খুলে গ্লাসে ঢেলে রোদে রাখলে ওপরে ভাসমান গ্যাসের বুদ্‌বুদগুলো খুব দ্রুত মিইয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, মেরু অঞ্চলের গলে যাওয়া বরফ খণ্ডগুলো সমুদ্রের পানির ওপরের স্তরে একধরনের আবরণ সৃষ্টি করে। এর ফলে নিচের লবণাক্ত পানি ওপরের বাতাসের সংস্পর্শে আসতে বাধা পায়। এ কারণে সাগরের পানি বাতাস থেকে অক্সিজেন পায় না।

এভাবে সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের অভাব সৃষ্টি হচ্ছে। কোনো কোনো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে গত ৫০ বছরে অক্সিজেনের মাত্রা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। অক্সিজেনের অভাবে মাছ বাঁচতে না পারলে জীববৈচিত্র্য দারুণ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সমস্যাটির প্রতি আরও বেশি নজর দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , ,

oceantimesbd.com