জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৭ কোন দিকে যাচ্ছে?


জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ২৭ এর প্রথম চার দিনের আলোচনা শেষে এটি মনে হচ্ছে যে, গতবারের কপ২৬ এর তুলনায় এইবারের সম্মেলনটি অনেকখানি সফলতার দিকে যাবে। কারণ, গতকাল মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিঅন কপ২৭ সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজের ক্ষতিপূরণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ৫.৭ মিলিয়ন ডলার প্রধানের অঙ্গীকার করেন।

আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিশেল মার্টিন সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ক্ষয়ক্ষতি কাঁটিয়ে ওঠার জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করেন।

এছাড়া, অস্ট্রিয়ার জলবায়ু মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার প্রদানের অঙ্গীকার করেন। এছাড়া, আজ বুধবার জলবায়ু সম্মেলনের চতুর্থ দিনে জার্মানি এবং বেলজিয়াম সহ বিশ্বের আরো কিছুসংখ্যক ধনী দেশ এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সাহায্য করার জন্য তহবিল প্রদান করবে।

চ্যান্সেলর ওলাফ স্কলস বলেছেন জার্মানি ১৭০ মিলিয়ন ইউরো প্রদান করবে গ্লোবাল শিল্ডের জন্য সাতটি ধনী দেশ যুক্ত হয়ে, বীমা এবং দুর্যোগ সুরক্ষা অর্থকে শক্তিশালী করার জন্য ভি২0 গ্রুপ এর ৫৮টি দেশকে অর্থ প্রদান করবে।

বেলজিয়াম জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি ফিরিয়ে আনতে ২.৫ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশের অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতি মোকাবেলায় ক্ষতিপূরন প্রদানের প্রতিশ্রুতি অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই সম্মেলন আশা দেখাচ্ছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া সহ নন-ইউরোপিয়ান উন্নত দেশগুলোকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখনো সম্মেলনে যোগ না দিলেও এ সপ্তাহের শেষে শুক্রবারের দিকে সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন এবং তিনি কি প্রতিশ্রুতি দেন সেদিকে বাংলাদেশ সহ উন্নয়নশীল দেশগুলো তাকিয়ে আছে।

এদিকে জলবায়ু সম্মেলনের চতুর্থ দিনে বাংলাদেশে বুথ এ তিনটি ইভেন্ট সম্পন্ন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম ইভেন্টে সাউথ এশিয়ান দেশগুলোর মন্ত্রীদের সাথে একটি বৈঠক বা সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলি এবং তা থেকে উত্তরণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানান এবং তার জন্য কি পরিমান ফাইনান্সিয়াল সাপোর্ট লাগবে সে বিষয়ে আলোচনা করেন।

দ্বিতীয় অধিবেশনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ সম্পর্কিত সাউথ এশিয়ান দেশগুলোর প্রস্তাবিত প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সন্ধ্যার অধিবেশনে ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান অর্থাৎ NAP প্রজেক্ট নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কি কি কাজ হবে এবং এর জন্য প্রস্তাবিত অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

এছাড়া, বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার নিয়ে সেমিনারে অংশ নেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড: হাসান মাহমুদসহ বিশ্বের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। সেমিনারে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মোট জ্বালানীর ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পাওয়ার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ।

তাছাড়া, চতুর্থ দিন বুধবার সকালের অধিবেশনেই জলবায়ুপরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের জন্য ন্যায় বিচার চাইতে এবং ঋণ উন্নয়নের সংক্রান্ত বিষয়ে এশিয়ান পিউপলস মুভমেন্টস নামে একটি মানববন্ধন হয়েছিল। এ মানববন্ধনে লেডি নেকপিল বলেন “জলবায়ুর অর্থায়ন ছাড়া আর কোন বিচার নেই,” অন্যদিকে সম্মেলনের স্পিকার বলেন জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বেশি সক্ষম হচ্ছে, এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশ গুলো সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে।

পরিশেষে বলা যায় যে, ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনের কক্ষগুলোতে জলবায়ু সম্পর্কিত যেসব আলোচনা তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার পাশাপাশি সম্মেলনের বাহিরে অনেকগুলো সংগঠন জলবায়ুর ন্যায্যতা, ক্ষয়ক্ষতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার এবং জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের যে দাবি উঠেছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সম্মেলনের বিভিন্ন কক্ষে ক্ষয়ক্ষতি জন্য যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ নিয়ে কথা হচ্ছে তার চেয়েও বেশি ক্ষয়ক্ষতি রোধে যে কার্যক্রম গুলো জরুরি তাতে গুরুত্ব আরোপ করেছে বাহিরে থাকা বিভিন্ন সংগঠনগুলো।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , , ,

oceantimesbd.com