পানির উত্তপ্ততা সমুদ্রে বাড়িয়ে দিচ্ছে জেলিফিশ, বলছেন বিজ্ঞানীরা

সম্প্রতি ইসরায়েলের ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসছে জেলিফিশ। জেলিফিশের আধিক্যের কারণে সেখানকার পানি এতটা গাড়ো হয়েছে যে সেখানকার ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্টগুলিকে আটকে দেওয়ার হুমকি তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে সাঁতারুদের সমুদ্রে সাতারকাটার পরিস্থিতিও বন্ধ হয়ে আসছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসছে।

কেন ওই অঞ্চলে বেড়েছে জেলিফিশের আধিক্য। কেনইবা এরা ছুটে আসছে উপকূলের দিকে। এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে গবেষকরা পেয়েছেন জলবায়ু সংকটের সম্পৃক্ততার তথ্য। তারা বলছেন, সেখানে জেলিফিশের অত্যাধিক বংশবৃদ্ধির জন্য পানি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে পড়া অন্যতম কারণ হতে পারে।

ইসরায়েল নেচার অ্যান্ড পার্কস অথরিটির গাই লাভিয়ান রয়টার্সকে বলেছেন, ‘পানি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এবং আমরা আরও বেশি করে জেলিফিশ দেখতে পাচ্ছি। তারা এখানে সত্যিকারের ক্ষতি করে। আপনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এই বিশাল ঝাঁকগুলিতে অবদান রাখে।’

চলতি মাসে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের শহর হাইফা উপকূলে জেলিফিশের অত্যাধিক উপস্থিতি দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৯৫০ এর দশক থেকে বিশ্বজুড়ে অনেক জেলিফিশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, উত্তর-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, হাওয়াই এবং এমনকি অ্যান্টার্কটিকার মতো দূরবর্তী স্থানে জেলিফিশের জনসংখ্যা অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সান দিয়েগোর স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অফ ওশানোগ্রাফি বলছে, উষ্ণ জলের ফলে বেশি জেলিফিশের জন্ম হয়, যার অর্থ হতে পারে কিছু জায়গায় সমুদ্র উত্তপ্ত হওয়ার সাথে সাথে আরও জেলিফিশ দেখা যাবে।

উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউটের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯০ শতাংশই সমুদ্রে শেষ হয়েছে। ১৯০১ সাল থেকে সমুদ্রের উপরের স্তর, যেখানে বেশিরভাগ সামুদ্রিক জীবন রয়েছে সেটি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ হয়েছে।

জেলিফিশ জনসংখ্যার উপর এই উষ্ণতার প্রভাব অভিন্ন নাও হতে পারে বলে মত স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অফ ওশানোগ্রাফির। খাদ্যের উৎস্য কমে গেলে জেলিফিশের সংখ্যা কিছু জায়গায় কমতে পারে বলেও মনে করেন তারা।

তারা আরও বলছে, বৈশ্বিক তাপের বাইরে জলবায়ু সংকটের দ্বারাও জেলিফিশ প্রভাবিত হতে পারে। কেননা জলবায়ু সংকট সমুদ্রে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে এবং কিছু জেলিফিশ নিম্ন-অক্সিজেন পরিবেশের প্রতি সহনশীল, যা তাদের আরও প্রভাবশালী করে তুলতে পারে।

কিন্তু জলবায়ু সংকট সমুদ্রকে আরও অম্লীয় করে তুলছে এবং বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না যে কীভাবে আরও অম্লীয় মহাসাগর আমাদের প্রভাবিত করতে পারে বলেও মত স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অফ ওশানোগ্রাফির বিজ্ঞানীদের।

যাই হোক না কেন, জেলিফিশ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের একটি লিঙ্ক যা দীর্ঘদিন ধরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা ৫০০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি পুরানো জেলিফিশের জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন, যার অর্থ তারা তাদের দীর্ঘ জীবনকালে ডাইনোসরদের আসা-যাওয়া উভয়ই দেখেছেন।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , ,

oceantimesbd.com