বন্ধের পথে উপকূলজুড়ে গড়ে ওঠা অক্সিজেন কারখানা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে উপকূলজুড়ে জাহাজ ভাঙা শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রায় ১৫টির বেশি অক্সিজেন কারখানা।

করোনা-পরবর্তী সময়ে শিপইয়ার্ডগুলোতে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমে যাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার ও এলসি-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে জাহাজ ভাঙা শিল্প। এতে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে অক্সিজেন কারখানা।

তাছাড়া বড় ইস্পাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিজ উদ্যোগে অক্সিজেন উৎপাদন করায় অক্সিজেন কারখানার চাহিদাও কমে গেছে। গত দেড় থেকে দুই বছরে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত অর্ধেকের বেশি অক্সিজেন কারখানা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটা, ইস্পাত শিল্পে রড় উৎপাদনে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এ শিল্প খাতগুলোতে অক্সিজেনের চাহিদা বেশি থাকায় সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন কারখানা গড়ে তোলা হয়। তবে বর্তমানে ইস্পাত শিল্পের বড় বড় প্রতিষ্ঠান নিজেদের খরচ কমানোর জন্য নিজেরাই অক্সিজেন উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছে। তাছাড়া একের পর এক ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে অক্সিজেন কারখানাগুলোর চাহিদা দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। তাই এ খাতের ব্যবসায়ীরা কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে যাওয়া পথের কারখানাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ব্রাদার্স অক্সিজেন লিমিটেড, রিগ্যাল অক্সিজেন লিমিটেড, ফয়জুন অক্সিজেন প্লান্ট, সীমা অক্সিকো লিমিটেড, রাইজিং অক্সিজেন লিমিটেড, রুবাইয়া অক্সিজেন, মাহিন এন্টারপ্রাইজ, মানতি অক্সিজেন লি, মদিনা অক্সিজেন লিমিটেড, এআরএল অক্সিজেন ও এসএল অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানা এখনো বন্ধ রয়েছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া মদিনা অক্সিজেন লিমিটেডের এক সাবেক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) জানান, মদিনা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানাটি জাহাজ ভাঙা শিল্প খাতের এক ব্যবসায়ী কিনে নিয়েছেন। সেটা অন্য নামে এখন চলছে। আমাদের ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে অক্সিজেন উৎপাদন নিয়মিত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যার কারণে প্রতিষ্ঠানটি মালিক বিক্রি করে দিয়েছেন।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মূলত ক্রয়াদেশ না থাকায় গত দুই বছরে ১০টির বেশি অক্সিজেন কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যার সর্বশেষ সংযোজন হলো ব্রাদার্স অক্সিজেন, ফয়জুন অক্সিজেন, এআরএল অক্সিজেন ও সীমা গ্রুপের দুই অক্সিজেন কারখানা। এ কারখানাগুলো গত ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ হয়েছে। তবে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় চালু থাকা অক্সিজেন প্লান্টগুলোতে পরিদর্শনের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া করোনার সময় অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত অক্সিজেন বিক্রির ক্রয়াদেশ না এলে কারখানা চালু করা সম্ভব না।

বিএসবিআরএর সহকারী সচিব নাজমুল ইসলাম বলেন, শিপইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে গত তিন বছরে প্রায় ৬৫ শতাংশ অক্সিজেন কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্য অক্সিজেন কারখানাগুলোও নিয়মিত উৎপাদনে যাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছে বলে জানান তিনি।

বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রাদার্স অক্সিজেনের মালিক মোহাম্মদ মহসীন জানান, শিপইয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহকে কেন্দ্র করেই সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন কারখানা গড়ে ওঠে। কিন্তু গত দু-তিন বছরে শিপইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজ কমে যাওয়ায় এগুলো কাটার ক্ষেত্রে অক্সিজেনের চাহিদা কমে গেছে। যার কারণে অনেক অক্সিজেন কারখানা এ এলাকা থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। আমার কারখানাও বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com