মিরসরাইয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং, আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে না মানুষ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় রূপ নিয়েছে। মোখা মোকবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুটি পৌর এলাকায় প্রশাসনের উদ্যোগে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শনিবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়েছে। সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। মোখা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।

শনিবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত হয়ে থাকা সাইক্লোন সেন্টারগুলো। তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন সেন্টারে কেউ আসেনি।

মিরসরাই উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছি। পৌরসভা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সাথে সভা করে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে শুকনো খাবার, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের ব্যবস্থা রয়েছে।

মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে মাইকিং করা হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে যাওয়ার জন্য। এছাড়া সাগরে যত মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত বোট ও নৌকা ছিলো সবগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে।

মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় সভা করে গতকাল রাত থেকে আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়াও সেচ্ছাসেবক টিম ও ছাত্রলীগের কর্মীরা দূর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে জনসাধারণকে সচেতন করতে চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নের পক্ষে মাইকিং করা হয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা সিপিপি টিম লিডার এম সাইফুল্লাহ দিদার বলেন, ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় আমাদের ৮০ টিম মাঠে থাকবে। ৮০ টিমে এক হাজার ছয়শত স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। যারা নিজ নিজ ইউনিটে প্রচারণার কাজ করছে। একটি টিমে ১০ জন পুরুষ ও ১০ জন মহিলা সদস্য রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার বিকাল থেকে আমাদের মাইকিং চলছে। এছাড়াও মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হাত-পা ধরার বাকী আছে শুধু। তবুও তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পন কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ ও চিকিৎসা সরাঞ্জামসহ আমরা ১৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করেছি। কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলায় প্রায় ৯৮% বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। বাকি যেগুলো রয়েছে সেগুলো আজকের মধ্যে কাটা হয়ে যাবে বলে আশা করছি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক বলেন, উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়নগুলোর জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার সবকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, ৩৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এগুলো সর্বদা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও রোববার (১৪ মে) শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কার্যক্রম চালু থাকবে।

মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ষ্টেশনের ষ্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টসহ আমাদের ৩টি টিম গঠন করা হয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের টিম প্রস্তুত রয়েছে।’

মিরসরাইয়ের সামাজিক সংগঠন সোনালী স্বপ্ন পাঠশালার পরিচালক মঈনুল হোসেন টিপু বলেন, ‘উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের বেড়িবাধ এলাকার মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে সকাল থেকে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝাচ্ছি। এখনো পর্যন্ত তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ’

সামাজিক সংগঠন দুর্বার প্রগতি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাসান সাইফ উদ্দিন জানান, ঘূর্নিঝড় মোখা মোকাবেলায় দুর্বার প্রগতি সংগঠনের দুটি টিম প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী যে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য। এছাড়াও আমাদের সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে ৮ নাম্বার মহাবিপদ সংকেতের ৩টি পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখনো পর্যন্ত কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না। তারা বলছেন, আমাদের গৃহ-পালিত পশু আছে। যদি পরিস্থিতি ভয়াবহ দেখা দেয়, তাহলে আমরা রবিবার সকালে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাবো।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , ,

oceantimesbd.com