সেন্ট মার্টিন জুড়ে মোখার ধ্বংসের চিহ্ন


ঘূর্ণিঝড় মোখায় দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে কয়েক শ ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। গত রোববার ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করলেও তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য পওয়া যায়নি। সোমবার সরেজমিনে গিয়ে সেন্ট মার্টিনের বিবর্ণ চেহারা চোখে পড়ে। কাঁচা-আধাপাকা ঘর তছনছ হয়ে গেছে। এদিক-সেদিকে গাছ-ডালপালা পড়ে আছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌ চলাচল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এরপর দুপুর ১২টায় টেকনাফ জেটিঘাট থেকে যাত্রীবাহী স্পিডবোট সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে পৌঁছে জেটি পার হতেই দেখা মেলে সেন্ট মার্টিন যাত্রী পরিবহন সার্ভিস বোট সমিতির সভাপতি রশিদ আহমেদের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম পাশ দিয়ে মিয়ানমারের দিকে গেছে, এটা আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। না হয় এবার বাতাসের যে ভয়ংকর গতি দেখেছি, তা এর আগে কখনো চোখে পড়েনি। ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় দেখার অভিজ্ঞতাও আমার রয়েছে। ভাটার টানের কারণে জলোচ্ছ্বাস না হওয়ায় দ্বীপ ও দ্বীপের মানুষ ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত সেন্ট মার্টিনের মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে যায় না। তবে এবার টিভি এবং সামাজিক মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনের জলোচ্ছ্বাস নিয়ে বারবার সতর্ক করার কারণে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে। এ কারণে জলোচ্ছ্বাস না হলেও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানের কারণে ভাঙা গাছ কিংবা উড়ে আসা টিনে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’

তার ধারণা, দ্বীপের আড়াই হাজার ঘরবাড়ির মধ্যে ৭০০টির মতো পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। বাকিগুলো কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডেইলপাড়া, দক্ষিণ ও পূর্বপাড়া।

পুরো দ্বীপে কড়ই, আম, নারিকেলগাছ উপড়ে ও ভেঙে পড়ার ক্ষতচিহ্ন দৃশ্যমান। মানুষের ঘরবাড়ি কিংবা ভাঙা গাছগুলো পড়ে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। গাছ কেটে চলার পথ উন্মুক্ত করতে দেখা গেছে অনেক এলাকায়।

ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও সোমবার দুপুর পর্যন্ত প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের সহায়তা মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। অবশ্য দুপুর সোয়া ১টায় স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারের স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি স্পিডবোটে করে সেন্ট মার্টিনে যান। পরে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দ্বীপটির প্রায় এক হাজার ৮০০ নারী-পুরুষকে নগদ অর্থ সহায়তা হিসেবে ১০ লাখ টাকা বিতরণ করেন বলে জানান স্থানীয় চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।

সেখানে কথা হয় মাঝেরপাড়া এলাকার বৃদ্ধ মো. রেণু মিয়ার (৭০) সঙ্গে। তিন ছেলে, নাতি-নাতনি মিলে তার ১১ জনের সংসার। দোতলা গাছের ঘরের টিন উড়ে গেছে। তিন দিন ধরে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়ে আছেন। কবে মেরামত করে নিজের ঘরে ফিরবেন সেটা জানেন না। প্রশাসন থেকেও ঘর মেরামতে আর্থিক সহায়তার কোনো আশ্বাস মেলেনি।

জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি আব্দুর রহমান বদি বলেন, ‘আমি ক্ষতিগ্রস্তদের তাত্ক্ষণিক সহায়তা হিসেবে নগদ অর্থ দিতে এসেছি। এরপর প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নেবে।’ তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিনে ৩০০ থেকে ৩৫০টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। বাকিগুলো কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিকেলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেন্ট মার্টিন পরিদর্শনে যান। কামরুজ্জামান বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের দুই হাজার ২০০ মানুষকে জরুরি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আজ ৮০০ জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সাগরের পরিস্থিতি ভালো থাকলে বাকিদেরও দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ করা হবে।

দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে ৮ নম্বর ওয়ার্ড কোনারপার এলাকায় চোখে পড়ে সবুজ দেয়ালের স্কুলঘর। সেন্ট মার্টিন ক্রিড প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের সেমিপাকা স্কুলঘরটির টিনের ছাদ উড়িয়ে নিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। জানতে চাইলে স্কুল কমিটির সভাপতি মো. ইসহাক বলেন, ‘স্কুলটিতে প্রায় আড়াই শ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। সামনে বর্ষাকাল। তার আগেই স্কুলের ছাদ মেরামত করা না গেলে ক্লাস শুরু করা যাবে না।’

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , , , ,

oceantimesbd.com