ভরা মৌসুমেও মেঘনায় মিলছে না ইলিশ, জেলেদের দুর্দিন

ভরা মৌসুমেও ভোলার মনপুরার মেঘনা নদীতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। নদীতে জাল ফেলে খালি হাতে ফিরে হতাশা নিয়ে তীরে ফিরছেন জেলেরা। বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক জেলে। তাদের দাবি, গত বছর এইসময় তারা ভালো মাছ পেলেও এবছর ইলিশ যেন সোনার হারিণ হয়ে গেছে। আর এ কারণে তাদের দুর্দিন চলছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে মেঘনা নদী চষে বেড়াচ্ছেন মনপুরা উপজেলার জেলেরা। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত জাল ফেলেও ধরা দিচ্ছে না ইলিশ। আর কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ না পেয়ে হতাশা নিয়ে তীরে ফিরে আসছেন জেলেরা।

এদিকে, ইলিশের ভরা মৌসুমে ইলিশ শিকারের আশায় মনপুরা উপজেলার অনেক জেলেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নতুন নৌকা, ট্রলার ও জাল কিনেছেন। কেউ আবার পুরোনো নৌকা, ট্রলার ও জাল মেরামত করেছেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে নদীতে গিয়ে আশানারূপ ইলিশ না পেয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। আর সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে মাঝ সমুদ্রে গিয়েও মাছ শিকার করতে পারছেন না তারা।

মনপুরা উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের জেলে নুরুজ্জামান মাঝি, মিলন মাঝি, হারুন মাঝি ও জহির মাঝি জানান, বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। তারা বড় বড় আশানুরূপ ইলিশ শিকারের আশায় ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত দল বেঁধে নদীতে জাল ফেলেন। কিন্তু ২/৪ টির বেশি মাছ পাওয়া যায় না। তাও আবার ছোট সাইজের ইলিশ। কিন্তু গত বছরও এসময় তারা ভালো মাছ পেয়েছেন।

হাজিরহাট ইউনিয়নের নাগর মাঝি ও কামরুল মাঝি জানান, এবার ইলিশের মৌসুম শুরু হওয়ার আগে তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা, ট্রলার ও জাল মেরামত করেছেন। আর নদীতে গিয়ে তারা ভালো ইলিশ শিকার করে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু নদীতে গিয়ে তারা ২/৪টির বেশি ইলিশ পাচ্ছেন না। তা ঘাটে বিক্রি করে ট্রলারের তেল ও সংসারের জন্য বাজারের টাকাও ঠিকমত ওঠে না। আর এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করবেন কীভাবে। যে কারণে কিস্তির সময় হলে তারা পালিয়ে বেড়ান এবং মাঝেমধ্যে তাদের স্ত্রীরাও ঘর থেকে সরে যান।

মনপুরা ইউনিয়নের রামনেওয়াজ মৎস্যঘাটের ব্যবসায়ী মো. নাহিদ জানান, অফ সিজনে তিনি ঢাকা ও চাঁদপুরের পাইকারি আড়ত থেকে মোটা অঙ্কের দাদন এনে জেলেদের দিয়েছেন। কথা ছিল মৌসুম শুরু হলে ইলিশ দিয়ে টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু এখন ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ায় সেই আড়তদারদের মাছ না পাঠাতে পেরে চাপে আছেন তিনি।

মনপুরা উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন জানান, বর্তমানে নদীর পানির গভীরতা কম থাকায় সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসতে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণেই নদীতে ইলিশ সংকট রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত শুরু হলে নদীর পানিবৃদ্ধি পাবে তখন জেলেরা পর্যাপ্ত ইলিশ পাবেন এবং তাদের দুর্দিন কেটে যাবে।

ভোলার মনপুরা উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার জেলে আছেন। এরমধ্যে সরকারি নিবন্ধিত জেলেদের সংখ্যা রয়েছে ১৪ হাজার ৩৪৮ জন।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , ,

oceantimesbd.com