কয়রায় সুপেয় পানির কষ্ট

মাত্র দুই কলস পানি দিয়ে মেটে ২০০ শিশুর তৃষ্ণা

  • উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪২টি। এর মধ্যে ৪১টিতে গভীর নলকূপ নেই। ১৩টি বিদ্যালয়ের নলকূপ দীর্ঘদিন ধরে অকেজো।
  • এসব কলসে থাকে পুকুরের পানি। সেই পানিতে ফিটকিরি মিশিয়ে পান করতে হয়।
  • আমাদী ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ২৫টি বিদ্যালয়ে পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়।
  • কয়েকটি বিদ্যালয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানির ট্যাংকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয়।

খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গভীর নলকূপ কিংবা সুপেয় পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিশুদের পানযোগ্য পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এমনও বিদ্যালয় আছে, যেখানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর তৃষ্ণা মেটাতে মাত্র দুই কলস পানি পাওয়া যায়। তা-ও পুকুরের পানিতে ফিটকিরি মিশিয়ে পান করতে হয়।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪২। এর মধ্যে ৪১টিতে গভীর নলকূপ নেই। ১৩টির নলকূপ দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। আর ৪০টিতে নলকূপ থাকলেও তাতে লবণাক্ততা বেশি। ৩৫টি বিদ্যালয়ে স্বল্প ধারণক্ষমতার ট্যাংকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হলেও চাহিদা পূরণ হয় না। এসব বিদ্যালয়ে ২২ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণের সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে এক হাজার মিলিগ্রাম। তবে কয়রার কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নলকূপের পানিতে প্রতি লিটারে ছয়-সাত হাজার মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

কয়রা মদিনাবাদ কলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে একটি নলকূপ থাকলেও লোনাপানি ওঠে। পরে তিনি দূরের নলকূপ থেকে কলসি ভরে পানি সংগ্রহ করে রাখার ব্যবস্থা করেছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, হড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ভাগবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৩টি বিদ্যালয়ের নলকূপ বিকল। জায়গীর মহল, উত্তর ক্ষেপনা, বানিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৪০টি বিদ্যালয়ের নলকূপের পানি একেবারেই লবণাক্ত।

আমাদী ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ২৫টি বিদ্যালয়ে পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া কয়েকটি বিদ্যালয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানির ট্যাংকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হলেও তাতে বর্ষাকাল শেষে পরবর্তী এক মাসের জন্য পানির জোগান থাকে। বাকি সময় পুকুরের পানি ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে শিশুদের পানের ব্যবস্থা করা হয়। আবার বেশ কিছু বিদ্যালয়ে নলকূপের প্ল্যাটফর্ম থাকলেও নলকূপ নেই।

কয়রার দক্ষিণ চান্নির চক শিশু মেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোছিমোন্নেছা বলেন, বিদ্যালয় চলাকালে প্রতিদিন প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের পুকুর থেকে দুই কলস পানি এনে, তা ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে শিশুদের খাওয়াতে হয়। বিদ্যালয়ের ১৯৩ জন শিশুর জন্য দুই কলস পানি খুবই অল্প। সুপেয় পানির সমস্যা সমাধানে নতুন একটি নলকূপ স্থাপন করা প্রয়োজন।

হড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরাপদ বর্মণ জানান, পাঁচ বছর আগে তাঁদের স্কুলের গভীর নলকূপটি নষ্ট হয়ে গেছে। আশপাশে কোথাও গভীর নলকূপও নেই। পানির জন্য অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

গোবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুর ইসলাম বলে, ‘তৃষ্ণা পেলে পাশের বাড়িতে যাই পানি খেতে। কিন্তু অনেক সময় তারা বকা দেয়। মাঝেমধ্যে বাসা থেকে পানি নিয়ে আসি। শেষ হয়ে গেলে না খেয়েই থাকি।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অধিকাংশ স্কুলের গভীর নলকূপ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অনেক জায়গায় আবার একেবারেই নেই। শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে বোতলে করে পানি নিয়ে আসে। আমরা এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছি। আশা করি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কয়রার উপসহকারী প্রকৌশলী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, কয়রার ১৫টির মতো বিদ্যালয়ের ছাদে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।

তা থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিশুরা। এ ছাড়া যেসব বিদ্যালয়ে বহুতল ভবন আছে, সেগুলোতে ওয়াশ ব্লকের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করা সম্ভব। বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যালয়ে নলকূপ, পানির ট্যাংক স্থাপন করে পানির সংকট দূর করা সম্ভব হবে।

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , ,

oceantimesbd.com