অবাধে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা, হুমকিতে মাছের প্রজনন

দেশে মিঠাপানির একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী দূষণে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। ফটিকছড়ি উপজেলায় নদীর বৃহৎ অংশজুড়ে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। জোয়ার-ভাটায় সেই আবর্জনা পানিতে মিশে পচছে। এতে নদীর মৎস্য প্রজনন কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

হালদায় প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে কার্পজাতীয় রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ ডিম ছাড়ে। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হওয়ায় হালদায় পাওয়া ডিম থেকে উৎপাদিত মাছের আকৃতি ও স্বাদও অনন্য। এ জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ডিমের চাহিদা রয়েছে। তবে দখল-দূষণে দিন দিন নদীর পরিবেশ খারাপ হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পুরোনো সেতু থেকে নারায়ণহাট পুরোনো সেতু পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকার নদীর বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য ফেলে স্তূপ করা হয়েছে। সেই আবর্জনা ধীরে ধীরে মিশছে নদীর পানিতে। পচা আবর্জনায় কিছু স্থানে নদীর পানি কালো হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, নাজিরহাট বাজারের পশ্চিম পাশে হালদাপাড়ে গরু জবাই করে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। বাজারের পশ্চিম পাশে মাছ বাজার, কাঁচা বাজারের ময়লাসহ সব বর্জ্যই আসলে ফেলা হয় হালদার পাড়ে। সেখান থেকে আবর্জনা ধীরে ধীরে হালদার পানিতে মিশে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বিষাক্ত করছে নদীর স্বচ্ছ পানিকে।

এ ছাড়া দখলদারদের কবলে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে হালদার প্রশস্ততা। বাঁশের আড়ত, লাকড়ির দোকান, গাছের টুকরা মজুতসহ নানাভাবে হালদাকে গ্রাস করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। এতে হালদার প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে।

নাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী দিদারুল আলম সওদাগর বলেন, বাজারে ময়লা ফেলার নির্ধারিত ডাস্টবিন না থাকায় ব্যবসায়ীরা হালদা পাড়ে ফেলেন। হালদার পানি দূষিত হলেও বাধ্য হয়েই তাঁরা এটি করেন। তাঁর অভিযোগ, নাজিরহাটকে পৌরসভা করা হয়েছে ৫ বছর আগে। তবে বাজারের নোংরা পরিবেশ এখনও রয়েছে। এ বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

নারায়ণহাট কলেজের ছাত্র মো. রুবেল বলেন, নারায়ণহাটের আবর্জনা সেতুর ওপর থেকে সরাসরি পানিতে ফেলা হয়। অনেকবার প্রতিবাদ করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ী সিরাজদৌল্লাহ চৌধুরী দুলাল জানান, বাজারের সব বর্জ্য হালদার বাঁধে ফেলা হয়। এতে নদীদূষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ বিষয়ে বাজার কমিটি বা পৌরসভা থেকে ব্যবসায়ীদের সচেতন করা প্রয়োজন।

নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র সিরাজ উদ দৌলা বলেন, হালদা নদী আমাদের অনেক উপকার করে আসছে। এটি দখল ও দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। হালদাকে রক্ষায় পৌরসভা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হালদা নদী বিশেষজ্ঞ মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদায় জোয়ার-ভাটা হওয়ায় নদীর ওপরিভাগে কোনো বর্জ্য ফেললে তা সহজে নদীর পানিতে মেশে। সেই আবর্জনা পচে এর পানিকে বিষাক্ত করে তোলে। হালদার মতো নদীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি নাজিরহাট পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির রাহমান সানি বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র: সমকাল

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

সব সংবাদ

For add

oceantimesbd.com