‘সমুদ্রসম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে’

 

সমুদ্রসম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পার্টিসিপ্যাটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দোহা। তিনি বলেন, সমুদ্র পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কিন্তু বিজ্ঞান বলে বর্তমানে সমুদ্রের এ শোষণ ক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। যার কারণে সমুদ্র কোনো কমিউনিটির জন্য আশানুরূপ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে পারে না। এছাড়া সম্পদের যথার্থ ব্যবস্থাপনা না থাকায় সমুদ্র থেকে পাওয়ার মতো অনেক সম্ভাবনাময় ও লাভজনক সুবিধা নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে সমুদ্রের টেকসই উন্নয়ন এ শোষণ নিশ্চিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। আমাদের উচিত যথার্থভাবে সমুদ্র সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। যাতে করে আমাদের সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষিত হয়। সমুদ্রসম্পদ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও আমরা কিভাবে সমুদ্রসম্পদ ব্যবস্থাপনা করতে হয় তা জানি না। সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনা বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

এছাড়া তিনি টেকসই সমুদ্রসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য একাডেমিশিয়ান, পলিসি মেকার এবং সমুদ্র সম্পদের ওপর নির্ভরশীল মানুষদের মধ্যে ভালো বুঝাপড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশান ইনফরমেশন সার্ভিসেস, ইউনেস্কোর ইন্টারগভর্নেন্টাল ওশেনোগ্রাফিক কমিশন, ইউনাইটেড নেশনস ডিকেড অব ওশান সায়েন্স ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (২০২১- ২০৩০) প্রোগ্রামের সহযোগিতায় আয়োজিত ১২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অধ্যাপক ড. সুব্রত সরকারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পৃথিবী পৃষ্ঠের ৭০ শতাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে মহাসাগর। মানুষের জীবন মূলত সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল। মহাসাগর ভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বার্ষিক টার্নওভার ৩ থেকে ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুধুমাত্র মৎস্য খাত বছরে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রায় ২৬০ মিলিয়ন চাকরির সুযোগ করে দেয়। তাই জীবন ও জীবিকার জন্য সমুদ্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

এ সময় বিশেষজ্ঞদের রেফারেন্স দিয়ে তিনি বলেন, ‘২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ৯ বিলিয়ন হবে। এই বিশাল জনসংখ্যার বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য এবং চাকরির প্রয়োজন হবে। সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার সম্ভাবনা রয়েছে; কিন্তু দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এজন্য সামুদ্রিক সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ভৌতবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ বদিউজ্জামান ফারুক, স্বাগত বক্তা হিসেবে গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. মো. রাশেদ তালুকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. গাউছিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী, ওঘঈঙওঝ এর গবেষক ড. নিমিত কুমার বক্তব্য রাখেন।

এ ছাড়া প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রথম দিনে জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্র সম্পদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন মো. শামসুদ্দোহা। এছাড়া ১২ দিনব্যাপী আয়োজিত এ কর্মসূচিতে মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সামুদ্রিক স্থানিক পরিকল্পনা এবং সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামুদ্রিক সম্পদ, রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের জন্য রিমোট সেন্সিং এবং সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ডেটা সায়েন্স বিষয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব প্লেমাউথ এর ড. ইমোজেন ন্যাপার, ভারতের আইএনসিআইওএস এর ড. নিমিত কুমার, বাংলাদেশের শাবি, ঢাবি, চবি থেকে মোট ৬ জনসহ মোট ৫০ এরও বেশি প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com