রহস্যঘেরা মারিয়ানা ট্রেঞ্চ

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা প্রায় ৮৮৫০ মিটার, যা নেপাল ও চীনের সীমান্তরেখায় অবস্থিত। অপরদিকে সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত পৃথিবীর গভীরতম স্থান মারিয়ানা খাতের গভীরতা প্রায় ১১,০৩৪ মিটার (৩৬,২০১ ফিট) অর্থাৎ প্রায় ৭ মাইলের সমান! অর্থাৎ পুরো মাউন্ট এভারেস্টকেও যদি তুলে এনে এই জায়গায় ডুবিয়ে দেওয়া হয় তারপরও এভারেস্ট শীর্ষ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২১৩৩ মিটার (৭০০০ ফিট) নিচে থাকবে।

প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পূর্বে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে অর্ধচন্দ্রাকার আকৃতির।মারিয়ানা খাত আকারে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ২৫৫০ কিমি ধরে বিস্তৃত এবং গড় বিস্তার প্রায় ৬৯ কিমি।খাতটির দক্ষিণ প্রান্তসীমায় গুয়াম দ্বীপের ৩৪০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে পৃথিবীপৃষ্ঠের গভীরতম বিন্দু অবস্থিত। এই বিন্দুর নাম ‘চ্যালেঞ্জার ডিপ’ গভীরতা প্রায় ১১,০৩৪ মিটার। বিন্দুটি ১৯৪৮ সালে জাহাজে নাবিকেরাই আবিষ্কার করেন, সেই জাহাজের নাম “এইচএমএস চ্যালেঞ্জার ২”।

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ একটি অভিসারী প্লেটের সীমানায় অবস্থিত। মহাসাগরীয় লিথোস্ফিয়ারের দুটি অভিসারী প্লেট এখানে একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্লেটগুলির একটি এই সংঘর্ষের বিন্দুতে ম্যান্টেলের মধ্যে স্লাইড করে পৃথিবীর গভীরতম বিন্দু তৈরি করে। এই দুটি প্লেটের যোগাযোগ রেখায়, অবরোহী নমন একটি চ্যানেল তৈরি করে যাকে বলা হয় ওশানিক ট্রেঞ্চ।

এইভাবে, ওশানিক ট্রেঞ্চ পৃথিবীতে কয়েকটি গভীরতম সমুদ্রের অবস্থান তৈরি করে।যেখানে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ অন্যতম ।মহাসাগরীয় ভূত্বকের দুটি বিশাল স্ল্যাবের সংঘর্ষের কারণে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গঠন ঘটেছিল। এই প্রক্রিয়ায়, সমুদ্রের ভূত্বকের এক টুকরোকে ধাক্কা দেওয়া হয় এবং অন্যটির নীচে ধাবিত হই, যা ভূত্বকের নীচে একটি স্তরে ডুবিয়ে দেয়। ভূত্বকের দুটি টুকরা ছেদ করলে, ডুবন্ত ভূত্বকের বাঁকের উপরে একটি গভীর ট্রেঞ্চ দেখা দেয়। আর এটাই মারিয়ানা ট্রেঞ্চ।

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এ বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় প্রাণী রয়েছে যা আপনি পৃথিবীর গভীরতম স্থানের নীচে খুঁজে পেতে পারেন। এই প্রাণীগুলি গুরুত্বপূর্ণ মারিয়ানা ট্রেঞ্চ তথ্যের অংশ ।প্রায় অদৃশ্য প্রানিদের ৩টি ভাগে ভাগ করা হইছে। এই মারিয়ানা ট্রেঞ্চ প্রাণীর প্রথম শ্রেণী হল amphipods, যেগুলি চিংড়ির মতো ক্রাস্টেসিয়ান এবং খুব আকর্ষণীয় ধরনের।তাদের প্রচুর পাওয়া যায় এই চ্যালেঞ্জার ডিপে, কিছু সাদা বা ফ্যাকাশে গোলাপী প্রজাতি আছে।

দ্বিতীয় বিভাগ হল সামুদ্রিক শসা যা খুব নিপুণভাবে লুকানো থাকে। এগুলি সমুদ্রের নক্ষত্রের মতো ইকিনোডার্ম, যা পৃথিবীর অতল সমভূমি ঘোরাফেরা করতে এবং পলল থেকে খাদ্য তৈরি করে।।আপনি এখানে অ্যামিবা দেখতে পারেন কারণ তারা মারিয়ানা ট্রেঞ্চের সর্বত্র রয়েছে। বিভিন্ন আবহাওয়ার কারণে তাদের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই কারন; অ্যামিবা তার বিশাল গঠনের সাথে ভয়ানক দেখায়। তারা রাসায়নিক এবং পারদ এবং ইউরেনিয়ামের মতো উপাদান থেকেও প্রতিরোধী যা মানুষকে হত্যা করতে পারে।

মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতা এতটাই বেশি যে এই জায়গাটা চির অন্ধকার এবং এটিই সাগরতলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার স্থান। এছাড়াও, পানির চাপ এতটাই যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের স্বাভাবিক বায়ুচাপের তুলনায় তা ১০০০ গুণেরও বেশি! এ কারণেই এখানে স্বাভাবিকের চেয়ে জলের ঘনত্বও প্রায় ৫% বেশি। এতসব প্রতিকূলতার কারণে চ্যালেঞ্জার ডিপে মানুষের অবতরণ সহজ ছিল না।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , ,

oceantimesbd.com