সুন্দরবনের জামতলা সৈকতের প্লাস্টিক কুড়িয়ে আনলো স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

গবেষণা সফরে এসে সুন্দরবনের করমজলের জামতলি সমুদ্র সৈকতের প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে নিয়ে এসেছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেষবিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষণারত শিক্ষার্থী।

বুধবার (১৫ মার্চ) গবেষণা কাজে জামতলি সি বিচে যান তারা। এসময় সেখান থেকে দুই বস্তায় প্রায় ৪ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে আনেন তারা। পর্যটকদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করেন তারা। এ সময় বক্তারা বলেন, এই পরিচ্ছন্নতায় তেমন একটা প্রভাব না পড়লেও পর্যটকদের মাঝে জনসচেতনতা তৈরি করতে এমন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন তারা। গবেষণা কাজ শেষে সংগৃহিত বর্জ্যগুলো বন বিভাগের নির্ধারিত ডাম্পিং স্পটে পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

বিচ ক্লিনআপ পূর্ববর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেষবিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক এডভাইজার ও বন্যপ্রাণী গবেষক অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা বলেন, সুন্দরবনের বাঘ, হরিন ও বানরসহ বিভিন্ন প্রাণির বিচরণ রয়েছে এই সমুদ্র সৈকতে। অথচ এখানে এসে পর্যটকরা বিভিন্ন প্লাস্টিক আবর্জনা ফেলছেন। সাধারণত প্রাণীরা এইসব প্লাস্টিকের মোড়কে মজাদার খাবারের ঘ্রাণ পেয়ে নিজের খাবার মনে করে খেয়ে নেয়, যা তাদের স্টোমাকে গিয়ে আটকে যায়। এর মাধ্যমে প্রাণীগুলো মারা যায়। তাছাড়া, এখানে ফেলা প্লাস্টিক জোয়ারের মাধ্যমে সমুদ্রেও যায়। এতে সমুদ্রপ্রতিবেশও নষ্ট হয়। মাছের মাধ্যমে এইসব ক্ষতিকর উপাদান আমাদেরও পেটে যায়। তাই প্লাস্টিকের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা অতি জরুরি।

গবেষক দলের প্রধান ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ফ্লোরা-ফনাকে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা এই কটকাতে এসে আমরা খুব কাছ থেকে দেখতে পেলাম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এই জামতলা সৈকত প্রতিনিয়ত ক্ষয়ে যাচ্ছে। বড় বড় দূর্যোগ আগলে এখানকার গাছগুলো যেভাবে ভেঙে পড়ে আছে এই দৃশ্য আমাদের খুব কষ্ট দিচ্ছে। একইসঙ্গে গর্ববোধ হচ্ছে যে আমাদের একটি সুন্দরবন আছে বলেই আমাদেরকে মায়ের মতো বড় বড় দূর্যোগে বুক আগলে রক্ষা করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো যে মা আমাদের রক্ষা করছে আমরা তাকেই কষ্ট দিচ্ছি।

তিনি বলেন, প্রিয় সুন্দরবন যখন বড় বিপর্যয় কাটাতে হিমশিম খাচ্ছে আমরা তখন এই বনের ভেতর যত্রতত্র নানান ক্যামিকেলের মিশ্রনে তৈরি প্লাস্টিক পণ্য সুন্দরবনের বুকে ছুড়ে ফেলছি। এটা কষ্টদায়ক এবং অকৃতজ্ঞের আচরণ। আমরা সেটি বুঝাতেই প্রতিকী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি করছি। আমরা চাই এই ধরনের কর্মসূচি মানুষের মনকে যেন পরিচ্ছন্ন করে। তাহলেই পরিচ্ছন্ন থাকবে বন।

উপকূলে প্লাস্টিক পণ্য বিক্রিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটি উপক্ষা করে সুন্দরবনের গহীনে প্লাস্টিক পণ্য পাওয়ার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, শুধু সচেতনতা নয়, আমাদেরকে আইন প্রয়োগেও কঠোর হতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আইন বাস্তবায়নে আন্তরিক হলে এই বনে অন্তত প্লাস্টিক আসতো না। অথচ সুন্দরবনের টাইগার পয়েন্টের মতো প্রাণিদের বিচরণের অতি সংবেদনশীল একটি স্থানেও আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্লাস্টিক পড়ে থাকতে দেখেছি। এটা কষ্টদায়ক।

এর আগে সোমবার রাতে রাজধানীর সিদ্দেশ্বরীর বিশ্ববিদ্যায় ক্যাম্পাস থেকে রওনা হয়ে ৪ দিনের ফিল্ড ট্রিপে সুন্দরবনে আসে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ৭০ জন গবেষণারত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর একটি দল। এই সফরে সুন্দরবনের শব্দ, বায়ু, পানি ও প্লাস্টিক দূষণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনে এই অঞ্চলের বিরূপ প্রভাবগুলো নিয়ে গবেষণা করবেন তারা।

এ সময় বিভাগের শিক্ষক ড. মাহমুদা পারভীন, মার্জিয়াত রহমান তৃষা, নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com