সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ, অপেক্ষা করছে এক সোনালি ভবিষ্যৎ

পৃথিবির তাপমাত্র বেড়ে যাওয়ার কারনে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে প্রতিবছরই । অদূর ভবিষ্যতে হইতো তলিয়ে যাবে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ। প্রায়ই আমরা এই ধরনের কথা শুনে থাকি। কখনো কি শুনেছেন সমুদ্র নিয়ে ব্যপক পড়াশুনা হয় এবং এই পড়াশোনা করার বিষয়কে বলা হয় ওশানোগ্রাফি যা বদলে দিবে পৃথিবীর চিত্র? আজকে আমরা ওশানোগ্রাফি ,বাংলায় যাকে বলা হয় সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির একটা উক্তি থেকে সমুদ্রের গুরুত্ব বুঝা যায়।তিনি বলেন- Control of the seas means security. Control of the seas means peace. Control of the seas can mean victory. The united state must control the sea if it is to protect our security.’’

সমুদ্রের যথাযথ ব্যবহার এর মাধ্যমে নাটকীয়ভাবে ভাবে উন্নতি সাধনের উদাহরন হচ্ছে রোটারডাম, সিঙ্গাপুর, হংকং। আবার শুধু ভূমিবেষ্টিত দেশের সমস্যা বুঝা যায় আফগানিস্তান,নেপাল ও লাওস এর দিকে নজর করলে । সমুদ্রসীমার অভাবে দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈদেশিক বাণিজ্য অনেকটাই প্রতিবেশী দেশগুলোর দয়ার উপর নির্ভরশীল

ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ এমন এক জায়গায় অবস্থিত যার পাশেই রয়েছে বঙ্গোপসাগর এবং যেটি আবার ভারত মহাসাগরের সাথে যুক্ত। এর দ্বারা বাংলাদেশ সমুদ্র পথে বিশ্বের সকল প্রধান সমুদ্রপথের সাথে যোগাযোগ করতে পারে যা বাংলাদেশের জন্য সৃষ্টিকর্তার অনন্য দান। উপরন্ত ২০১২ এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আর্ন্তজাতিক আদালতের মাধ্যমে মায়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষপত্তির মাধ্যমে সমুদ্রসীমা বৃদ্বি পেয়েছে। সমুদসীমার দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৪ তম।

বাংলাদেশ একটি জনবহুলদেশ এবং দিন দিন এর জনসংখ্য বাড়তেই আছে। কিন্তু ভূমির পরিমান বাড়ছেনা কিংবা বাড়বেও না। সেখানে সমুদ্রের যথাযথ ব্যবহার খুলে দিবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। বঙ্গোপসাগরকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশের দ্বিগুণ পরিমাণ ভূমি বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠতে পারে। ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনে সমুদ্র নিয়ে ৩৯ টি আয়াত আছে। আল্লাহ বলেন-’’আর তিনি সে সত্তা ,যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন,যাতে তোমরা তা থেকে তাজা মাছের গোশত খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার অলংকারাদি,যা তোমরা পরিধান কর।আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে যা পানি চিরে চলছে এবং যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষন করতে পার এবং তার শুকরিয়া আদায় কর।’’-সূরা নাহল:আয়াত ১৪

সমুদ্র তলদেশশের সম্পদ আহরন,সমুদ্র পথে ব্যবসা বানিজ্য, সামুদ্রিক মৎস আহরন, লবন উৎপাদন, সমুদ্রকে ট্যুরিজম স্পট এ রুপান্তর করা, সমুদ্র শক্তির যথাযথ ব্যবহার পাল্টে ফেলতে পারে বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা। এবং বাংরাদেশ হতে পারে দক্ষিন এশিয়ার অন্ঞলিক ব্যবসা কেন্দ্র । উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে সমুদ্রের গুরুত্ব বুঝানোর সামান্যতম চেষ্টা করা হয়েছে। বিজ্ঞানের যে শাখায় সমুদ্র নিয়ে আলোচোনা করা হয় তাকে সমুদ্রবিজ্ঞান বা ওশানোগ্রাফি বলে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে অনেক আগে থেকেই ওশানোগ্রাফি পড়ানো হলেও বাংলাদেশে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন এই বিভাগ প্রতিষ্ঠি হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ওশেনোগ্রাফি পড়ানো হয়।

এই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে সুযোগ পেতে হয় এই বিষয়ে পড়ার। চার বছর মেয়াদি ওশানোগ্রাফি বিএসসি পড়তে হলে বিজ্ঞানের মুল চারটা বিষয় পদার্থ, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞানে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। সমুদবিজ্ঞান পড়লেই সমুদ্রেই থাকতে হবে বিষয়টা এমন না। আবার সমুদবিজ্ঞান পড়বেন অথচ সমুদ্রে যাবেনা এমন ও না। এটা দুঃখের বিষয় যে সমুদ্র ভালোবাসেনা এমন মানুষ পাওয়া না গেলেও সমুদ বিজ্ঞান পড়তে ছাত্ররা বিশেষ আগ্রহ দেখায়না। এর প্রধান কারন এই বিষয়ে যথেষ্ঠ জ্ঞান না থাকা এবং এই বিষয়ের উপর প্রচার প্রচারনা না থাকা। একজন ওশানোগ্রফার হিসেবে আপনি যোগ দিতে পারেন বাংলাদেম ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনিস্টিটিউট (বরি)তে, শিক্ষকতা করতে পারেন কিংবা গবেষক হয়ে উদ্ভাবন করতে পারে কাল জয়ী নতুন কিছু।পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়াও আছে অপার সম্ভবনা দ্বার। বিদেশে গমণ ছাড়াও ইচ্ছামত যেকোনো পেশা বেছে নেওয়ার সুযোগ তো আছেই।

বাংরাদেশে ওশানোগ্রাফিকে অনন্য উচ্চতায় নেয়ার জন্য দরকার একদল নির্ভিক,স্বপ্নবাজ, দেশপ্রেমিক সমুদ্রপ্রেমী তরুন প্রজন্মের । যাদের হাত ধরে আল্লাহর বিশেষ দান বঙ্গপসাগরকে যথাযথ ব্যবহার করে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে রাইজিং টাইগার থেকে লিডিং টাইগার এ স্থান করিয়ে দেবেএবং অবদান রাখবে বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০ বাস্তবায়নে।

উপরোক্ত আলোচনার পর বলার অপেক্ষা রাখেনা কেন পড়বো ওশানোগ্রাফি । যারা আগামী পৃথিবীর নেতৃত্ব দিতে চায়, দেশকে বিশেষ কিছু দিতে চায় ,বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করাতে চাই শুধু তারাই স্বেচ্ছায় ওশানোগ্রাফি পড়ার দুঃসাহস দেখাবে। এক্ষেত্রে ব্লু ইকোনোমির সুবিধা পেতে দেশে দক্ষ সমুদ্রবিজ্ঞানীর বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবে রুপায়িত হবে দক্ষ সমুদ্রবিজ্ঞানীদের হাত ধরেই।

শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট অব ওশানোগ্রাফি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , ,

oceantimesbd.com