‘দেশের প্রথম সমুদ্রবিষয়ক প্রযুক্তিগত শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে নতুন মাত্রা চবিতে’

সামুদ্রিক বিজ্ঞান এবং সংশ্লিষ্ট শাখায় বিশ্বব্যাপি প্রতিযোগিতামূলক স্নাতক তৈরি করার লক্ষ্যে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদ। যাদের মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্র, অর্থনীতি এবং সমাজের প্রয়োজনীয়তা মোকাবেলা করে সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহারের জন্য চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম হবে।

১৯৬৭-৬৮ সালের দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর আব্দুল লতিফ ভূঁইয়ার হাত ধরে জন্ম নেয় ডিপার্টমেন্ট অব মেরিন বায়োলজি এন্ড ওশানোগ্রাফি। সে থেকে এই ইন্সটিটিউটের পথচলা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস কানাডা সরকারের সহযোগিতায় সমুদ্র বিজ্ঞান বিষয়ক দেশের একমাত্র বিদ্যাপিঠ হিসেবে ‘মেরিন বায়োলজি বিভাগ’ নামে ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরু করে। যা পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস ২০০৬ সালে ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ এবং সর্বশেষ ২০১৭ সাল থেকে ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস নামে স্বতন্ত্র শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

পূর্বে ২টি ১ তলা বিল্ডিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র। সামুদ্রিক বিজ্ঞান শিক্ষা এবং গবেষণার পাশাপাশি সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার জন্য একটি উৎকর্ষ কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে চবির মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদ। আগামী ৪ জুন (রোববার) অনুষদটির উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি।

সম্পূর্ণ আধুনিক এই ফ্যাকাল্টিতে নতুন সংযোজনে রয়েছে ৫ তলা একাডেমিক ভবন। যেখানে ১টি ইনস্টিটিউট এবং ২টি ডিপার্টমেন্টের থাকবে যা ৫৬টি কক্ষ সম্বলিত। ৫ তলা বিশিষ্ঠ টিচার্স ব্লকে আছে ৩৫টি কক্ষ। একটি মেরিন অ্যাকোয়ারিয়াম ভবনও রয়েছে । এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক কাজ সম্পন্নের জন্য অডিটোরিয়াম এবং গবেষণার সুবিধার জন্য এই অ্যাকোয়ারিয়ামে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রজাতির প্রাণী থাকবে। প্রতিটি ইন্সটিটিউট ও ডিপার্টমেন্টের জন্য থাকবে অত্যাধুনিক ল্যাব, ক্যান্টিন, প্রেয়ার রুম সুবিধা সমূহ। নিখুঁত গবেষণার জন্যে সংযোজিত হবে আধুনিক প্রযুক্তি। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্যে যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল বোর্ড।

‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ গবেষণা ও সক্ষ্যমতা বৃদ্ধি’- শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নির্মিত একাডেমিক ভবনের শুভ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে নতুন সাজে সজ্জিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদটি আগামী ৪ জুন উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি।

আত্যাধুনিক এই অনুষদের অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সোলার সিস্টেম। নির্দিষ্ট ভবনের ছাদে সোলার প্যানেলগুলো বসানো থাকবে যা থেকে অনুষদের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। বাকি ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ বিশ্ববিদ্যালয় সরবরাহ করবে।

বর্তমানে ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস-এ সমুদ্র পর্যবেক্ষণ এবং পূর্বাভাস, মৎস্য সমুদ্রবিদ্যা এবং বাস্তুতন্ত্রের মডেলিং, উপকূলীয় প্রক্রিয়া, ভূ-রূপবিদ্যা এবং ব-দ্বীপ গঠন, সমুদ্রের অম্লকরণ এবং হাইপোক্সিয়া, সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তি, মেরিকালচার এবং সুনীল অর্থনীতি ও সামুদ্রিক স্থানিক পরিকল্পনা সহ সামুদ্রিক পরিবেশের শাসন এসব বিষয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির বিষয়টি দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সমুদ্রের রং নীল আর সে কারণেই সমুদ্রকেন্দ্রিক পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বলা হয় সুনীল অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনমি। বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, সমুদ্রে যে পানি আছে এবং এর তলদেশে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সে সবধরনের সম্পদকে টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করাকেই বলা হয় ব্লু-ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি। আর এসব বিষয়ে দক্ষ কারিগর গড়ে তোলাই এই অনুষদের লক্ষ্য।

IMS-ছয়টি পৃথক মাস্টার্স ডিগ্রি প্রোগ্রাম প্রদান করে। যেমন সামুদ্রিক বিজ্ঞান, সামুদ্রিক মৎস্য, উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক জলজ পালন, সামুদ্রিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, মাছের পুষ্টি এবং ফিড প্রযুক্তি এবং সামুদ্রিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , ,

oceantimesbd.com