দূষণে বিপর্যস্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য

দূষণের প্রতীক

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সামুদ্রিক শৈবাল এবং রঙিন প্রবালের কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। সেন্ট মার্টিনের নাম শুনলেই চোখে ভেসে উঠবে স্বচ্ছ নীল জল, কাঁকড়া,পাথুরে সৈকত, প্রবাল, শৈবাল, নানা প্রকার কচ্ছপ এবং চমৎকার সব জীববৈচিত্র্যের মিশ্রণ। কিন্তু বর্তমানে দ্বীপের পরিবেশগত ঝুঁকি বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। যার ফলে দ্বীপটি পরিবেশগতভাবে এবং বীচ ইকোসিস্টেম চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল প্রাচীর দ্বীপ। যা দেশের দক্ষিণে ২০ ডিগ্রি ৩৪ মিনিট উত্তর হতে ২০ ডিগ্রি ৩৯ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২ ডিগ্রি ১৮ মিনিট পূর্ব হতে ৯২ ডিগ্রি ২১ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত । যার আয়তন প্রায় ৫.৯ বর্গকিলোমিটারি দ্বীপটি প্রায় ১৩ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি চ্যানেল দ্বারা বাংলাদেশের মূল ভুখন্ড হতে পৃথক।

প্লাস্টিক বোতলের মাধ্যমে দূষণ

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের একদল শিক্ষার্থী সহ সরেজমিনে পর্যবেক্ষণে সেন্টমার্টিন দূষণের কিছু গুরত্বপূর্ণ কারণ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। প্লাস্টিকের বোতল, চায়ের কাপ, ফিশিং ট্রলারের নেট, নোঙর করা, শিপ বা বোট কর্তৃক নিঃসৃত তৈল ইত্যাদি কর্মকাণ্ড দ্বারা দ্বীপের সৌন্দর্য এবং সামুদ্রিক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। পর্যটকের আগমন আগস্ট মাসে শুরু হয় এবং প্রতি বছর এপ্রিলে শেষ হয়। নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। আট হাজারের বেশি স্থায়ী বাসিন্দাদের সাথে প্রতিদিন গড়ে চার হাজারের ও বেশি পর্যটক ৫.৯বর্গ কিলোমিটার দ্বীপে রাত্রিযাপন করে। পর্যটকরা সামুদ্রিক পরিবেশকে দূষিত করে অ-বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য (প্লাস্টিক সামগ্রী, চিপসের প্যাকেত, চায়ের কাপ) ইত্যাদি সমুদ্রে ফেলে। জাহাজটি সমুদ্রে তেল এবং বর্জ্য পদার্থও নিঃসরণ করে এই কার্যক্রমগুলি সামুদ্রিক পরিবেশ দূষণে অনেক কাজ করে। পর্যটকের চাহিদা বৃ্দ্ধি পাওয়ায় রিসোর্টের সংখ্যা বাড়ছে ফলে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ, পাখি, কাকড়া, শামুক -ঝিনুকের আবাসস্থল নষ্ট করে ফেলছে। এছাড়া ফিশিং ট্রলারের নেট দ্বারা সামুদ্রিক শৈবাল, কোরাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ট্রলারের যেখানে সেখানে নোঙর করাই ক্ষতি হছে কোরাল এবং প্রাণীর আবাসস্থল।

পর্যটকদের যেখানে সেখানে সিপসের প্যাকেট ফালানো।

কক্সবাজার পরিবেশ ও মৎস্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বীপটিতে ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৫৭-১৫৮ প্রজাতির শামুক, ২৪০ প্রজাতির মাছ এবং ১২০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. শেখ আফতাব উদ্দিন বলেন, এই ছোট দ্বীপে বৃহত্তর অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে ট্যুরিজম অব্যহত রেখে সরকার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের চারপাশে একটি সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকা স্থাপন করতে পারে, যা মাছ ধরা, নোঙ্গর করা এবং পর্যটনের মতো কার্যকলাপগুলিকে সীমাবদ্ধ করবে ফলে প্রবাল প্রাচীর এবং দ্বীপের জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করা সম্ভব হবে এমনকি ইকো-ট্যুরিজমের মতো টেকসই পর্যটন অনুশীলন করতে পারে।

নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রসেস না থাকায় অনেক মূল্যের শৈবাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য বিবেচনা করে পর্যটনকে প্রচার করতে হবে। পরিবেশ বান্ধব পর্যটন অনুশীলনের মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , ,

oceantimesbd.com