যান্ত্রিক নগরে নান্দনিক মেরিটাইম মিউজিয়াম

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ কেউ বন্ধু-বান্ধবীকে আবার অনেক তরুণ-তরুণীও ঘুরতে এসেছে নগরীর কাজীর দেউড়ির আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রামের একমাত্র মেরিটাইম জাদুঘরটিতে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সমুদ্রে চলাচল করা জাহাজগুলো যেন উঠে এসেছে তীরে। এখানে রয়েছে জাহাজসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহৃত যুদ্ধ জাহাজ ও কামান। সাজানো গোছানো কামানগুলো দেখলেই আগ্রহ জন্মায় একটু ছুঁয়ে দেখার, কাছে গিয়ে ছবি তোলার। তাই সুযোগ পেয়েই কাছে গিয়ে ছবি তোলার লোভও সামলাতে পারছেন না ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।

জাদুঘর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, আগের চেয়ে বেড়েছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৫০০ জনের বেশি দর্শনার্থী আসছেন। তবে এটি সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে এখানে শিক্ষিত শ্রেণির দর্শনার্থীরাই বেশি আসছেন। এখানে দেখা ও শেখার অনেক কিছুই আছে, যা সবারই দেখা ও জানা প্রয়োজন তাই এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

জাদুঘরের সংগ্রহশালায় যা আছে : নৌ ইতিহাস নিয়ে তৈরি মেরিটাইম জাদুঘরটিতে প্রবেশ করতেই একটি বড় মাঠ রয়েছে। এ মাঠে রয়েছে বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের আধুনিক নানান নৌযান, কামান ও গোলাবারুদ। মাঠের বাম পাশ থেকেই চোখে পড়ে ‘এডমিরালটি স্ট্যান্ডার্ড স্টকলেস এংকর, তারপর ‘সি২ মাইন, মিসাইল লঞ্চার, সি-৮০২ মিসাইল, টর্পেডো বোট, ৩০ মি.মি কামান, ম্যাগনেটিক এবং সাবসনিক ইনডাকশন গ্রাউন্ড মাইন টাইপ ৫০০ এস ও ৪০/৬০ মি.মি. বাফার গান’ নামের ১৯৭১ সালের যুদ্ধ কামান।

মাঠের দক্ষিণ পাশেই রয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবন। এ ভবনে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র। এর পাশেই শোভা পাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণীদের শিল্পকর্ম ও চিত্র। যেগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন দর্শনার্থীরা। ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠতেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও বৃটিশ শাসনামলে বাণিজ্য করতে আসা বাংলাদেশের সামুদ্রিক অংশীদারগণের লোগো। কক্ষের ভেতরে রয়েছে সমুদ্রে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সমুদ্র ও নৌকার শিল্পকর্ম। রয়েছে সাম্পান, মালার নৌকা, চাঁদ নৌকা, বজরা, ঘাসি নৌকাসহ নানা রকমের নৌকা।

এছাড়া জাহাজের মধ্যে রয়েছে বাইচ/রেস বোট। স্বর্ণযুগের ঐতিহ্য অনুসরণ করে জমিদার ও নবাবরা বার্ষিক নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো এ নৌকার মাধ্যমে। সেই নৌযানটি এখানে স্থান পেয়েছে। আরো আছে নানারকম বাণিজ্যিক জাহাজ। এ জাহাজগুলোতে চাল, ডালসহ সব রকম দ্রব্যসামগ্রী আমদানি রপ্তানি করা হয়। অনুসন্ধানী ও উদ্ধারকারী উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে বিএম মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট একটি। এটি ২৯ আগস্ট ২০১৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশনিং করা হয়। বানৌজা চিত্র নামের আরেকটি বাংলাদেশি নৌবাহিনীর টহল জাহাজ স্থান পায় এখানে। এমন অনেক নৌ শিল্পকর্ম দেখা যায় যা মুগ্ধ করে দর্শকদেরকে।

চট্টগ্রাম কলেজ’র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান ও জোনায়েদ সাকিব দেখতে এসেছে মিউজিয়াম।

তারা বলেন, এখানে শুধু ঘুরতে এসেছেন এমন না। মূলত আমাদের সমুদ্র বিজ্ঞান নিয়ে একটি পড়াশোনার অংশ রয়েছে, তাই আসা। এখানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী সম্বন্ধীয় বন্দুক জাহাজ, টর্পেডো, নৌকাসহ জলসীমা নিয়ে নানা তথ্য রয়েছে। এগুলো আমাদের গবেষণার জন্য প্রয়োজন।

নগরীর ২ নাম্বার গেইট এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে এসেছে মনির আহমেদ। তিনি বলেন, ছেলে মেয়েকে নিয়ে আমি এমন কিছু জায়গায় ঘুরতে পছন্দ করি যেখানে শিক্ষামূলক কিছু থাকে। চট্টগ্রামে এমন কিছু জায়গার মধ্যে এ জাদুঘরটি একটি। তাই এখানে আসছি। বাচ্চারাও দেখছি খুব উৎসাহ নিয়ে দেখছে।

জাদুঘরে প্রবেশ ফি : জাদুঘরে প্রবেশের টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে শুধু মাঠের ক্ষেত্রে ১০ টাকা এবং মিউজিয়ামের ভেতরসহ প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। মূল জাদুঘরটি খোলা থাকে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এছাড়া মাঠ খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: ,

oceantimesbd.com