সমুদ্রে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী

সমুদ্রের অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে অক্টোপাস সবচেয়ে দুর্দান্ত প্রাণী।অক্টোপাস আটটি বাহু বিশিষ্ট সামুদ্রিক প্রাণী। দেখতে শামুকের মত না হলেও এরা শামুক, ঝিনুকের জাতভাই অর্থাৎ মোলাস্কা পর্বের অন্তর্ভুক্ত। এদের মাথার ঠিক পিছনেই আটটি শুঁড়-পা আছে তাই এরা সেফালোপডা বা “মস্তক-পদ” শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

এরা নিশাচর, সাধারণত ধীর গতিসম্পন্ন। প্রায় ১৫০ প্রজাতির ছোটবড় বিভিন্ন আকারের অক্টোপাস রয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগর, ভূমাধ্যসাগর, ভারত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর- সর্বত্রই প্রাণীটিকে দেখা যায়।

সমুদ্রের গভীরে, পাথরের খাঁজে এই প্রাণীটির বাস।পাথরের খাঁজে একবার চেপে বসতে পারলে একটা বড়সড় অক্টোপাস তার কর্ষিকার আকর্ষণে একজন মানুষকে টেনে ডুবিয়ে দিতে পারে। ওদের প্রধান অস্ত্র ওদের ধারালো দাঁত আর দেহের কাঁটা। ওদের শরীরে রয়েছে বিষের থলি, যেখান থেকে বিষ ঢালা আর কালো রং ছিটিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করে শত্রুকে কাবু করতে ওরা খুব পটু। উত্তেজিত হলে ঘন ঘন রঙ বদলায়।

আকৃতিঃ সাধারণত অক্টোপাসগুলো খুব একটা বড় হয়না। দৈর্ঘ্য হয় সর্বোচ্চ ৪.৫ ফিট এবং ওজন হয় প্রায় ১০ কেজি। তবে এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলে এক প্রজাতির অক্টোপাস রয়েছে যা জায়ান্ট অক্টোপাস নামে পরিচিত। এটি অন্য যে কোন অক্টোপাস থেকে বড়। এর নাম ডলফিনি অক্টোপাস। এটি লম্বায় প্রায় ৩০ ফিট এবং ওজন প্রায় ২৭৫ কেজি পর্যন্ত হয়।

অক্টোপাস মাংসাশী প্রাণী। মাছ , কাকড়া, চিংড়ি ইত্যাদি অক্টোপাসের প্রিয় খাদ্য। অক্টোপাসের আত্নরক্ষার কৌশল বেশ অদ্ভুত। এরা ইচ্ছেমত নিজের দেহের রঙ পরিবর্তন এবং মাথার নিচের নলাকার ফানেল জলপূর্ণ করে দ্রুতবেগে বের করে দিয়ে তাড়াতাড়ি দূরে সরে যেতে পারে। রং পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের বালি, পাথর, উদ্ভিদ ইত্যাদির সাথে এমনভাবে মিশে যেতে পারে যে হাঙ্গর, ইল, ফিন (অক্টোপাসের প্রধান শত্রু) খুব কাছ থেকেও একে শনাক্ত করতে পারে না।

এছাড়াও এদের দেহে কালি থলে থাকে যার সাহাহ্যে অক্টোপাস নিজের দেহ থেকে ঘন কালো কালি ছুঁড়ে দিতে পারে যা শত্রুকে কিছুক্ষণের জন্য অন্ধ করে দেয়। এ কালির আরেকটি গুণ হচ্ছে এটি শত্রুর ঘ্রাণশক্তিও কিছুক্ষণের জন্য নষ্ট করে দেয়। ফলে অক্টোপাসটি পালিয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত আত্নরক্ষার কোন উপায় না পেলে অনেক সময় এরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অথবা নিজের বাহু খেতে আরম্ভ করে! অক্টোপাস খুব দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে যা এটির আত্নরক্ষায় সহায়ক।

অক্টোপাসের একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল রঙ বা বর্ণ পরিবর্তনের ক্ষমতা। এর ত্বকেআঁচিলের মত ফুস্কুড়ি থাকে। ত্বকের নিচে অনেকগুলি ক্রোমাটোফোর আছে। ক্রোমাটোফোরে নানা রঙের কোষ থাকে। এসব কোষের সাহাহ্যেও এরা দেহের রঙ পাল্টায়।

স্ত্রী অক্টোপাস প্রায় দেড় লক্ষ ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। বাচা বের হবার পর মা অক্টোপাস মারা যায়।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , , , , ,

oceantimesbd.com