সাগর অফুরন্ত নিয়ামতের ভান্ডার

সমুদ্র থেকে পাওয়া শক্তি চিরন্তন। সমুদ্রের একটি আশ্চার্য দিক আছে যাতে মানুষের জীবনে অনেক উপকার হয়। প্রতিদিনের চাহিদা পূরণের জন্য আমরা বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী খেতে পারি বা বিক্রি করতে পারি। যেমন মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল, মুক্তা এবং আরও অনেক কিছু।

এক দেশ হতে অন্য দেশে পণ্য পরিবহনে প্রয়োজন একটি সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর সে কাজটাকে সহজ করে দিয়েছে সমুদ্র বা জলপথ। অন্যদিকে আকাশপথে বা সড়ক পথে পণ্য পরিবহন খুবই ব্যয়বহুল ও ঝক্কি ঝামেলার ব্যাপার। এদিক থেকে চিন্তা করলে সাগর মানুষের জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ।

আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়কে সহজ করে দিয়েছে জলপথ। অথচ প্রকৃতির কল্যাণে নিয়োজিত এই সমুদ্রের উপর মানুষ নির্বিচার অত্যাচার করে চলেছে প্রতিনিয়ত। নানা রকম প্লাস্টিক বর্জ্যে দূষিত হয়ে চলছে সাগরের পানি। এতে ব্যাহত হচ্ছে সমুদ্রে মৎস্য উৎপাদন।

সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ কমে গিয়েছে। নষ্ট হচ্ছে চোখ জুড়ানো প্রবাল ও সমুদ্রের সামগ্রিক পরিবেশ। সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। সামুদ্রিক পরিবেশের উপর মানুষের নির্বিচার অত্যাচারের কুপ্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নেও।

বর্তমান জামানা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের তুঙ্গে রয়েছে। এমন এমন বিচিত্র সব বিষয় বস্তু এখন প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ জানতে সক্ষম হয়েছে যা কয়েক শতাব্দী আগেও যা ছিলো মানুষের কাছে কল্পনাতীত। যা কিছু মানুষের কাছে আজও অজানা তা মহান সৃষ্টিকর্তার নখদর্পণে।

কৌতূহলী মানুষের দৃষ্টি এবং একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টি কখনোই এক নয় যদিও চোখের পাওয়ার একই। সাগর তীরে কিছু মানুষ ঘুরতে যান শুধু চিত্ত বিনোদনের জন্য। কিন্তু কিছু অনুসন্ধানী মানুষ যায় অজানাকে জানতে, অজানাকে জানাতে, কৌতূহল মেটাতে। সাগর কেন এত অপরুপ, কী তার রহস্য তা মানুষকে জানতেই হবে।

এই জানার আগ্রহ মানুষের ভিতর জাগিয়ে তোলে অনন্ততর পিপাসা। শুধু সাগরের ঢেউ দেখলে কি চলে? নাকি সাগরতীরে কোনো মানবীর আলতা রাঙা পা ভেজানো অথবা একটু প্রশান্তির গোসল, বিচিত্র সব শামুক-ঝিনুক-মুক্তা কুড়ানো? এতেও কি মন ভরে? নাহ একদমই নয়।

মানবী প্রিয়ার যৌবন হয়তো একসময় চলিয়া যায়, কিন্তু সাগরতো অনন্ত যৌবনা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই পদ্মা নদীর মতোই। যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী কৌতুহলী মানুষদের পিপাসা মিটিয়ে চলেছে কালের নীরব সাক্ষী এই সাগর- নদী।

সাগরতলে কি আছে তা দেখার জন্য মানুষ ছুটে চলেছে গহীন সমুদ্রের তলদেশে। সাগরজলে রয়েছে বিচিত্র সব প্রাণীর অভায়ারণ্য। আরো আছে স্বর্ণের খনি, হিরা, মণি-মুক্তা-জহরত। চোখ জুড়ানো, মন জুড়ানো সব প্রবাল।

এক সময় যেসব শৈবালকে মানুষ নিছকই সামুদ্রিক আবর্জনা মনে করত, এখন সেই সব শৈবাল শোভা পাচ্ছে মানুষের খাবার টেবিলে। শৈবাল পুষ্টি জোগাচ্ছে মানুষের দেহে। বাড়াচ্ছে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

সাগরতলে শুধু স্বর্ণের খনি খুঁজেই মানুষ ক্ষান্ত হয়নি, মানুষের কৌতূহলের চোখ পড়েছে সাগরতলে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র আছে কিনা সেদিকেও। তেল ও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেই মানুষ বসে থাকেনি, বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হয়েছে তাদের তেল ও গ্যাসের ব্যবসা।

ধনীদের কাতারে নাম লিখিয়েছে কয়েকটি দেশ শুধু তেল,গ্যাস আহরণ, মজুদ ও বিক্রি করে। রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠেছে তাদের অর্থনীতি। মরুভূমির সেই ছোট দেশগুলোও এখন বিশ্বের প্রভাবশালী অর্থনীতির দেশ যারা কিনা এক সময় মরুর বুকে উট চড়াতো।

নিঃসন্দেহে আল্লাহর পরিকল্পনাই উত্তম। মানুষ যা এখনো কল্পনা করতে পারে না, মহান আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই সেই সব গোপন রহস্য সমগ্র বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন। তাই বলা যায়, সমুদ্র বিচিত্র সব রহস্যের আধার।

অদূর ভবিষ্যতে, সমুদ্র হতে হয়তো এমন কিছু আবিষ্কার হবে যা আমরা এখনো কল্পনাই করতে পারছিনা, অপেক্ষা শুধু সময়ের। আল্লাহ কুরআনে বলেন, “তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে যেসব রং-বেরঙের বস্তু ছড়িয়ে দিয়েছি, সেগুলোতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্যে যারা চিন্তা-ভাবনা করে।

তিনিই কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন সমুদ্রকে, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাংস খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার পরিধেয় অলঙ্কার। তুমি তাতে জলযান সমূহকে পানি চিরে চলতে দেখবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহর কৃপা অন্বেষণ কর এবং যাতে তার অনুগ্রহ স্বীকার কর।” (সূরা নাহল, আয়াত ১৩-১৪)

মহাবিশ্বের মহাস্রষ্টা আল্লাহ। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাবিদ। এ বিশ্ব চরাচরের সবকিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়। পৃথিবীর সর্বত্র তিনি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন অগণিত নিয়ামতরাজি। উদ্দেশ্য এটাই যে মানুষ তাঁর সব নি‘আমত ভোগ করবে আর একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে।

পরকালের অনন্ত জীবনের সুখ সন্ধান করবে পার্থিব নি‘আমত কাজে লাগিয়ে। এসব সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম একটি হলো সাগর। সাগর আল্লাহর এমন এক সৃষ্টি যা মানুষের জন্য অফুরন্ত নিয়ামতের ভাণ্ডার।

স্রষ্টার সৃষ্টির অপার বিস্ময় এ সাগর। সাগর মানুষের মাঝে নিরন্তর কৌতূহল জাগিয়ে রেখেছে সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই। এখনো চলছে সাগর নিয়ে মানুষের বিরামহীন গবেষণা ও অনুসন্ধান।

সৈকতে জোয়ার ভাটার দৃশ্য জ্ঞানীদের মনে অনেক ভাবনার উদ্রেক করে। মানুষের মনের আতঙ্ক বেড়ে যায়, যখন সাগরের বিশালাকার ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে লবণাক্ত পানির গতি সামনে বাড়িয়ে দেয় তখন। সমুদ্রে জোয়ার-ভাটা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় মানুষের জীবনের উত্থান-পতনের কথা, দুঃখ-কষ্টের কথা, মানুষ ক্ষণে ধনী, আবার ক্ষণে গরীব হতে পারে সেটা স্মরণ করিয়ে দেয়।

সাগর হলো বৈচিত্র্য ও বিস্ময়ের অফুরন্ত ভান্ডার। সাগর নিয়ে মানুষ যত গবেষণা করছে ততই জ্ঞান অর্জন করছে। প্রতিনিয়ত চমকপ্রদ সব তথ্য আবিষ্কৃত হচ্ছে। আল্লাহ মানুষের জন্য অফুরান কল্যাণের ভাণ্ডার সুপ্ত রেখেছেন সাগরে। তেল, গ্যাস, সোনাসহ নানাবিধ খনিজ সম্পদ মজুদ রেখেছেন সাগরবুকে।

সমুদ্রে ব্যাপক গবেষণা ও আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হবে। তাই কুরআনে সাগর নিয়ে চিন্তা-গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“তুমি কি দেখ না যে, ভূপৃষ্ঠে যা আছে এবং সমুদ্রে চলমান নৌকা তৎসমুদয়কে আল্লাহ নিজ আদেশে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তিনি আকাশ স্থির রাখেন, যাতে তার আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্ঠে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান।” [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৬৫]

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com