কেন মেশে না দুই নদী বা সমুদ্রের পানি ?

বাংলাদেশের চাঁদপুরে তিন নদীর মোহনায় গেলে দেখা যায় এখানে তিনটি নদী এক জায়গায় এসে মিলিত হলেও এর পানি মিশছে না। উলটো একি স্থানে চোখে পড়ে আলাদা রঙের পানি প্রবাহিত হচ্ছে কিন্তু খালি চোখেই সেই পানিকে আলাদা আলাদাভাবে বইতে দেখা যাচ্ছে।

এ নিয়েও কিন্তু বিস্ময়ের শেষ নেই। এখানে গেলেই সবার একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়, আর তা হলো, আশ্চর্য এখানে পানি মিলছে না কেন?

অনলাইনে ভাইরাল বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা যায় যে, আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মিলনস্থলে দুটি ভিন্ন রঙের পানি একে অপরের পাশাপাশি প্রবাহিত হচ্ছে কিন্তু মিশছে না। পরে এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়, যখন দুটি তরল একসাথে হয় তখন তারা তাদের উপাদানগত ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে হয় খুব দ্রুত একে অপরের সাথে মিশে যায় বা মিশতে সময় নেয় কিংবা একেবারেই মিশে না। এই মিশে যাওয়া বা না মেশার ব্যাপারটা সেই দুটি তরল পদার্থের বেশ কিছু গুণাবলীর উপর নির্ভর করে, যেমন, তাপমাত্রা, ঘনত্ব, প্রবাহের হার, প্রবাহের দিক, খনিজ বা অন্যান্য অপদ্রব্যের পরিমাণ, রাসায়নিক গঠন ইত্যাদি। এই পার্থক্য বা পার্থক্যগুলো যতো বেশি হবে, তরলের দুটি ভিন্ন ধারা মিশতে তত বেশি সময় নেবে। আর ঠিক এ কারণেই পাশাপাশি প্রবাহিত হলেও পানি না মেশার বিষটি সবার নজরে আসে।

এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে ❝গাল্ফ অব আলাস্কা❞ বা আলাস্কার উপসাগর। এটি উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে অবস্থিত একটি উপসাগর যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরের পানি ও আলাস্কার উপসাগরের পানির মিশ্রণ ঘটে না। দুই সমুদ্রের পানিই আলাদাভাবে পরিষ্কার দেখা যায়। আর এর পেছনের কারণ আলাস্কা থেকে আসা পানি মূলত “বেরিং” ও “মালাসপিনা” নামে দুটো প্রধান হিমবাহ থেকে গলে আসা উৎস। সে পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততাও থাকে অনেক কম। ফলে এর ঘনত্বও কমে যায়। কিন্তু ওপর দিকে থাকা প্রশান্ত মহাসাগরের পানির বৈশিষ্ট্য তার উল্টো। যার ফলে এই দুই সমুদ্রের পানি একসাথে মিশে না।

ঠিক যেমন পানির ঘনত্ব ও তার মধ্যে বিদ্যমান পদার্থের তারতম্যের কারণেই এই দুই সমুদ্রের পানি মেশে না, এমন কারণেই বাংলাদেশের দুই নদী পদ্মা ও মেঘনা একই সাথে মিলিত হলেও এদের সবাই আলাদা ভাবেই দেখতে পায়। কিন্তু দুই সমুদ্র বা নদীর পানি অবশ্যই মিশে। তা না হলে উভয় পাশেই পানির স্তুপ লেগে যেত। তবে সে মেশার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীর, যাতে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হচ্ছে না। আসলে এ ধারণাটি ভুল।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com