দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পল্লী জনপদের মানুষের জীবনে এনেছে স্বস্তি। প্রথমদিকে সচেতনতার অভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা গ্রহিতাদের ভিড় না থাকলেও এখন ক্লিনিকগুলোতে রোগীর ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। আর এ সকল ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

ইতিমধ্যে উপকুলীয় জনপদ খুলনার কয়রার উত্তর বেদকাশি বতুলবাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা মানুষের কাছে গ্রহন যোগ্যতা পেয়েছে। সরকারের পাশাপাশি এই ক্লিনিকটি জনসাধারন দেখা শুনার দায়িত্ব গ্রহন করে চালাচ্ছে এর স্বাস্থ্য সেবা। ক্লিনিকের পরিপাটি আর সবুজ সমাহার যেন চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের মনের খোরাক যোগাচ্ছে। সে এক মনোরম ছায়া ঢাকা পরিবেশে পল্লীর মানুষের কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। ভাল সেবা পেয়ে সাধারন মানুষ খুশি।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারী) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার অবেহেলিত জনপদ বতুলবাজার গ্রামে অবস্থিত ক্লিনিকটি সবুজ গাছগাছালি মধ্যে দাড়িয়ে আছে। পরিবেশ আর পারিপাশ্বিক অবস্থা খুবই ভাল। স্বাস্থ্য সেবায় সব সময় প্রস্তুত সিএইচসিপি। সাধারন মানুষ আসলেই দেওয়া হয় স্বাস্থ্য সেবা। যে কারনে প্রতিনিয়ত রোগীর ভিড় লেগেই আছে। সেবা নিতে গিয়ে আশালতা মুন্ডা বলেন, সব সময় ক্লিনিকটি খোলা থাকে সেবা পেতে তাদের কোন ভোগান্তীতে পড়তে হয় না।

ক্লিনিকের পরিচালনা কমিটির সভাপতি উত্তর বেদকাশী ইউপি সদস্য আবু হাসান বলেন, এখানে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিকল্পনা ও পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ দেয়া হয়। এ ছাড়া করোনার টিকা প্রদান, ইপিআই টিকা প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে এই ক্লিনিকে। মানুষের দৌড় গড়ায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার কারণে বড় ধরনের অসুখ ছাড়া উপজেলা ও জেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে অবহেলিত এ জনপদের মানুষ।

বতুলবাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি উম্মেহানী বলেন, বর্তমানে ক্লিনিকটি প্রাচীর দিয়ে আটকানো হয়েছে। তা ছাড়া ভাল পরিবেশ ঠিক রাখতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল বাগান ও সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুলতে গাছ লাগানো হয়েছে। এখানে সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় গর্ভবর্তী মহিলাদের প্রসব পূর্ব প্রতিষেধক টিকাদান এবং প্রসব পরবর্তী নবজাতকের সেবা দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, এই কমিউনিটি ক্লিনিকে এ পর্যন্ত অনেক নবজাতক প্রসব করানো হয়েছে। তা ছাড়া অন্যান্য রোগের জন্য সব সময় চিকিৎসা দেওয়ার পর বিনামুল্যে ওষুধ দেওয়া হয়।

ঐ ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মিতা রানী মন্ডল বলেন, এই ক্লিনিকে সব চিকিৎসা হয়। ওষুধ কিনতে হয় না। ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হয়। আগে শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো। সময়লাগতো বেশী, টাকাও খরচ হতো। কিন্তু এখন আর বাহিরে যেতে হয় না। সাধারণ রোগের চিকিৎসা তারা এখান থেকেই পাচ্ছেন।

ক্লিনিকের দায়িত্বরত স্বাস্থ্য পরিদর্শক মোঃ আকবার হোসেন বলেন, বতুলবাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে সময়মত প্রতিষেধক টিকাদান যক্ষা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়া সহ শিশু ও কিশোর কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণের জন্য ফলপ্রসূ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সেবা প্রদান করা হয়। ম্যালেরিয়া, কুষ্ঠ, কালা-জ্বর, ডায়রিয়া সহ অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সেগুলোর সীমিত চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে।

তিনি বলেন, জখম, জ্বর, ব্যথা, কাটা,পোড়া, সাপে দংশন, বিষক্রিয়া, হাঁপানী চর্মরোগ, ক্রিমি এবং চোখ, দাঁত ও কানের সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণ ভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরণ, কনডম, পিল, ইসিপি ইত্যাদি সার্বক্ষণিক সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিত করা হয়। সব চেয়ে মজার বিষয় সদ্য বিবাহিত ও অন্তসত্বা মহিলাদের নিবন্ধিকরণ ও সম্ভাব্য প্রসাবের তারিখ সংরক্ষণ করতে হয় কমিউনিটি ক্লিনিকে। মহিলা ও কিশোর-কিশোরীদের রক্তস্বল্পতা সনাক্ত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হয় বতুলবাজার ক্লিনিকে।

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, বতুলবাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসার মান খুবই ভাল। তিনি নিজ উদ্যোগে বরাদ্ধ দিয়ে ক্লিনিকের উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে। চমৎকার পরিবেশ দেখে তিনি পর্যায়ক্রমে অধিক বরাদ্ধ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন করার আশা ব্যক্ত করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ সুজিত কুমার বৈদ্য বলেন, বতুলবাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কারণে এই এলাকার দরিদ্র মানুষ আজ সঠিক ভাবে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে। উক্ত কমিউনিটি ক্লিনিক রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক রেড়েছে। বর্তমানে কয়রা উপজেলার মধ্যে বতুলবাজার কমিউনিটি ক্লিনিককে মডেল ক্লিনিক হিসাবে ঘোষনা করা হয়েছে।

খুলনা জেলা সির্ভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ বলেন, আমি একাধিকবার বতুলবাজার কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছি। সেখানে সেবার মান খুবই ভাল। তাদের কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে সুনাম বয়ে আসছে।