ভালোবাসা দিবসে পালিত হচ্ছে সুন্দরবন দিবস

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল সুন্দরবন। বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলোর অন্যতম প্রশস্ত বনভূমি এটি। এ ম্যানগ্রোভ বন বাংলাদেশের গর্ব। কেবল বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বই চায় সুন্দরবন বেঁচে থাকুক অনন্তকাল ধরে।

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্বজুড়ে যুগ যুগ ধরে দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। তবে সুন্দরবন সন্নিবেশিত পাঁচ জেলার মানুষ ২০০১ সাল থেকে আজকের দিনটিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন।

২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়।

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং অনন্যসুন্দর প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবন একাডেমির আয়োজনে খুলনাসহ সুন্দরবনঘনিষ্ঠ জেলাগুলোতে বেসরকারিভাবে ‘সুন্দরবন দিবসে’র নানাবিধ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে।

প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মায়ের মতো উপকূলের কোটি-কোটি মানুষকে নিরাপদে রাখলেও সুন্দরবন এখন নিজেই ভালো নেই। জলবায়ুর পরিবর্তনে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ, ম্যানগ্রোভ এই বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী চোরা শিকারি ও কাঠ পাচারকারীদের কারণে এর অস্তিত্ব এখন সংকটে।

বনবিভাগ বলছে, তারা আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট প্যাট্রোলিংসহ সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি সুরক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। ২৪ ঘণ্টায় ছয় বার প্রাকৃতিক রূপ বদলানো সুন্দরবনের মোট আয়তনের ৫২ ভাগই এখন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ। এই বনের মোট আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগই হচ্ছে জলাভূমি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই জলাভূমি ‘রামসার’ এলাকা হিসেবে স্বীকৃত।

বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনের তুলনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য অধিকতর সমৃদ্ধ। সুন্দরীসহ এই বনে রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড। বাঘ, হরিণ, কুমির, কিং কোবারা, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ২১০ প্রজাতির মৎস্য সম্পদ।

সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেমন ক্ষতবিক্ষত হয়ে মায়ের মতো উপকূলের কোটি-কোটি মানুষকে নিরাপদ রাখে- তেমনই এই জনপদের লাখ-লাখ মানুষের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হিসেবেও কাজ করে।

বন বিভাগের হিসাব মতে, ২০০১ সাল থেকে সুন্দরবনে এ পর্যন্ত ৫৭টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে মাত্র ১৭টি। চোরা শিকারিদের বাঘ শিকার নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক শ্রেণির জেলে খালে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ করে হুমকির মুখে ফেলেছে সুন্দরবনের মৎস্য ভাণ্ডারকে।

পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনেরে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে সুন্দরবনে। উজান থেকে মিঠা পানির প্রবাহ না থাকায় জলবায়ু পরিবর্তনেরে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও পূর্ণিমা ও আমাবস্যার জোয়ারে সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা করমরজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রেও ২/৩ ফুট পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বণ্যপ্রাণীর ডিম। ফলে কুমিরসহ যেসব বন্যপ্রাণী ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে বংশবিস্তার করে- তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন করমজল বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির।

প্রতিনিয়ত বনখেকোদের আগ্রাসনের ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে। সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ গোটা দেশের পরিবেশ।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , ,

oceantimesbd.com