কর্ণফুলী নদীর জায়গা দখল করে বন্দর লিজ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা অংশ পরিদর্শন করে নদী দখলের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

সোমবার (৬ মার্চ) সকালে তিনি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তীর দখল করে নির্মিত বেসরকারি ইন্টারকনট্রেড ডিপোসহ আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করেন। সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জায়গা ইজারা নিয়ে নদীর তীরে এসব স্থাপনা যুগ যুগ ধরে নির্মিত হয়ে এসেছে।

হুট করে তো সরানো সম্ভব হবে না। নদী দেখাশোনা করার দায়িত্ব নদী কমিশনের। এখন অবৈধ দখলদাররা বন্দরের ইজারার কাগজ দেখাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর তো কর্ণফুলী নদীর মালিক নয়, তারা কীভাবে নদীর অংশ ইজারা দেয়? সরকারি সম্পদ হিসেবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ইজারা দিতে পারে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যবসার লাইসেন্স অথরিটি। ইজারা এই সংস্থা কীভাবে দিল? এই প্রশ্নের সুরাহ করতে হবে।’

প্রতিদিনের বাংলাদেশকে নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগে কর্ণফুলী ড্রাইডক বন্ধ করে দেওয়ার একটা সিদ্ধান্ত ছিল। পরে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে এটা চলতে পারবে।

কিন্তু তার আগেই জেলা প্রশাসন লিখিত রিপোর্ট দিয়েছে যে, নদী দখল করে এই ড্রাইডকের বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠেছে। তাই আমরা মন্ত্রণালয়ের আদেশের বিষয়টি গ্রহণ করছি না। এই ড্রাইডক বন্ধের আগের সিদ্ধান্তটাই বহাল থাকবে। কেউ নৌ-মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে নদী দখল করতে পারে কি না, সেটি বিবেচনায় আনতে হবে।’

গত নভেম্বর মাসে কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে ওঠা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ড্রাইডকের কার্যক্রম সাত দিনের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী। পরে প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের নথি প্রদর্শন করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়। এভাবেই নদী কার, নদীর ভূমি কার, এমন টানাহ্যাঁচড়ায় কর্ণফুলী নদীর তীর দখলে নিয়ে নিশ্চিন্তে বহাল রয়েছে অবৈধ দখলদাররা।

বরিবার চট্টগ্রাম সফরে আসেন নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। রাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি কর্ণফুলী নদীর তীর দখল করে নির্মিত বরফকল, মাছবাজার, বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো, শিপ ইয়ার্ডের বিভিন্ন স্থাপনা সরানোর বিষয়ে কথা বলেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন চট্টগ্রাম নদী ও খালরক্ষা আন্দোলন ২০২২ সালে কর্ণফুলী নদীর গভীরতা ও দখল জরিপ করেছিল। এরমধ্যে চাকতাই খালের মোহনার উত্তর পাশে নদীতে গভীরতা পাওয়া যায় মাত্র সাড়ে ১৩ ফুট, আর দক্ষিণ পাশে তীরের কাছাকাছি গভীরতা পাওয়া যায় ৪৮ ফুট। একইভাবে রাজাখালী খালের মোহনায় গভীরতা পাওয়া যায় মাত্র ৪ ফুট। মাছবাজারে গড়ে ওঠা ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় নদীর গভীরতা পাওয়া গেছে সাড়ে সাত ফুট।

 

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

oceantimesbd.com