সমুদ্রের তীরে মরে পড়ে আছে তিমি

এ দেশের সমুদ্রসৈকতে তিমির ভেসে আসা খুব দুর্লভ ঘটনা নয়। যদিও তিমির ব্যাপারে সামুদ্রিক প্রাণ বিশেষজ্ঞ বা মেরিন লাইফ এক্সপার্টদের অংশগ্রহণ খুব কম দেখা যায় অথবা সেই ধরনের অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি অথবা তিমির মতো একটা প্রাণী সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে একধরনের অপারগতা লক্ষ করা যায়। তবে এবার ভেসে আসা তিমিটিকে আগের মতো অতিকায় মৎস্য না বললেও সেটা কোন গণ বা প্রজাতির, তা নিশ্চিত করা যায়নি এখনো। একদম সব না হলেও অনেক গণমাধ্যম অবশ্য তিমিকে আগের মতোই মাছ বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, মাছটি দেখতে কৌতূহলী জনতা ভিড় জমিয়েছে। আমাদের নবম ও দশম শ্রেণির জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ্যবইয়েও অবশ্য স্তন্যপায়ী তিমিকে তিমি মাছ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফের দিকে চলে যাওয়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে অবস্থিত হিমছড়ি সৈকত। এক পাশে খাড়া উঁচু পাহাড়, আরেক পাশে দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্র। সৈকতটা একটু নির্জন, কেমন যেন প্রাচীন পৃথিবীর অনুভূতি ঘিরে ধরে। এই সৈকতে ভেসে আসা দুটি তিমিরই ওজন আনুমানিক ১০ টন। প্রথমটি লম্বায় ছিল ৪৪ ফুট ও প্রস্থে ১৬ ফুট। দ্বিতীয়টি লম্বায় ৪৬ ফুট ও প্রস্থে ১৮ ফুট। তার মানে, প্রায় কাছাকাছি আকৃতির তিমি এ অঞ্চলে ভেসে আসে।

এ ধরনের তিমি আমাদের বঙ্গোপসাগরে রয়েছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এসব তিমি চোখে পড়ে। এক সামুদ্রিক প্রাণ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের জলসীমায় সচরাচর এত বিশালকায় তিমির দেখা মেলে না; গভীর সাগরে বড় জাহাজের ধাক্কায় অথবা শিকারিদের হত্যার কারণে তিমিটির মৃত্যু হতে পারে। অবশ্য পরিবেশবাদীদের ধারণা, বাংলাদেশের জলসীমার বাইরে তিমিটি মারা যেতে পারে; গভীর সাগরে মাছ ধরার জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগেও তিমিটি মারা যেতে পারে। পেটে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। কেউ বলেছেন এটি নীল তিমি, কেউ বলেছেন ব্রাইডস তিমি। তবে একজন বলেছেন, ‘হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসা তিমিটি হ্যাম্পবাক তিমি, অর্থাৎ কুঁজো তিমি। এটি মহাসাগরীয় প্রাণী।’ তাঁর থেকে আরও জানা যায়, এ-জাতীয় তিমি দলছুট হয়ে পড়লে মান–অভিমান বা হতাশায় অনেক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

সব কটি কথা একত্র করলে এটা বলা যায়, এই তিমিগুলো ব্যালিনপেটরা গোত্রের; এগুলোর আটটি প্রজাতি রয়েছে। এই গোত্রের যেমন নীল তিমি, ফিনব্যাক তিমি, হাম্পব্যাক তিমি, ব্রাইডস তিমি। শান্ত প্রকৃতির এ তিমি এর বাচ্চাগুলোকে স্তন্য পান করিয়ে লালন–পালন করে। এগুলোর আছে দীর্ঘ শৈশবকাল, যে সময়ের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক তিমিগুলো তরুণ তিমিগুলোকে শিক্ষা দেয়। খেলাধুলা এগুলোর সাধারণ অবসর-বিনোদন। এগুলো স্তন্যপায়ীর স্বাভাবিক ধর্ম এবং বুদ্ধিমান প্রাণীর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। সাগর হলো ঝাপসা, প্রায় অন্ধকার একটা জায়গা। স্থলে প্রাণীদের ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি ও ঘ্রাণশক্তি যত ভালোভাবে কাজ করে, মহাসাগরের গভীরে তত ভালোভাবে কাজ করবে না।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com