সেন্টমার্টিনে হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের প্রসংশনীয় উদ্যোগ

প্রতিদিন সমুদ্রে মিশছে প্রায় দুই লাখ টন প্লাস্টিক। প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণের ফলে সমুদ্রের মাছ, সামুদ্রিক জীবের প্রতিনিয়ত ক্ষতি হচ্ছে। যার প্রভাব জনজীবনেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিষয়টি চিন্তা করে প্রমোদ ভ্রমণের পাশাপাশি স্থানীয় ও পর্যটকদের মধ্যে জনসচেতনতায় বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে সাগরতীরের প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

অনুষদীয় শিক্ষা-সফরের অংশ হিসেবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে এসে তারা এই কর্মসূচি পরিচালনা করেন। অনুষদটির শিক্ষিকা অধ্যাপক ড.জান্নাতুল ফেরদৌসীর দিকনির্দেশনায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি সেন্টমার্টিনে তারা ‘বিচ ক্লিনিং প্রোগ্রাম’টি সম্পন্ন করে। এই ক্লিনিং কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সাথে অনুষদটির শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো.রেজওয়ানুল হক, অধ্যাপক ড.মো. রিয়াজুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক কৃষ্ণ চন্দ্র রায় ও সহযোগী অধ্যাপক ইমরান হোসেন অংশগ্রহণ করেন।

‘প্লাস্টিক পলিথিন না ফেলি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করি’, ‘Save the nature, get the better’, ‘Clean sea, safe sea’ এরকম অনেকগুলো স্লোগান সামনে রেখে ৯৪ জন শিক্ষার্থী দশটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন রিসোর্টের আঙিনা পরিষ্কার করে। দুপুর ২ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত চলে তাদের এই পরিষ্কার অভিযান।

পরিষ্কার অভিযান বিষয়ে মাৎসবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা জানান, জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য, পলিথিনসহ অনেক ধরনের আবর্জনা নির্দিষ্ট ব্যাগে সংগ্রহ করি। পরে তা ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিই।

তারা আরও বলেন, প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে বেড়াতে এসে ফেলে যান নানা রকম প্লাস্টিক বর্জ্য। সঙ্গে যোগ হয় স্থানীয়দের ব্যবহারিত বিভিন্ন পলিথিন বর্জ্য। অপচনশীল এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের ভারে হুমকিতে পড়েছে ছোট্ট এই দ্বীপের প্রাণ-প্রকৃতি। আমাদের এই কার্যক্রম দৃষ্টি কেড়েছে। কিছুটা হলেও জনসচেতনতা তৈরীতে ভূমিকা রেখেছে।

শিক্ষার্থীদের বিচ ক্লিনিং কার্যক্রমের দিক-নির্দেশনা দেন অনুষদটির অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌসী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভৌগলিক কারণে ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের অন্তিম গন্তব্য যেকোনো জলাধার হয়ে থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। আর সেন্টমার্টিনের মতো ছোট দ্বীপে পড়ে থাকা প্লাস্টিক যদি মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা না হয়, তবে এর পরিণাম শুধু এই দ্বীপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ছড়িয়ে পড়বে পুরো জাতি গোষ্ঠিতে।

শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগের প্রশংসা জানিয়ে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজ বলেন, সেন্টমার্টিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার এ উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয়। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করলে অবশ্যই সফল হওয়া সম্ভব হবে। আগামীতে সেন্টমার্টিনে আরো এ ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করলে তা দ্বীপের পরিবেশের জন্য তা খুবই উপকার বয়ে আনবে।

উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিনে প্রতিবছর অন্তত ১৫ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন। তাদের ধারাবাহিক অসচেতনতার মুখোমুখি পরিবেশ ও পর্যটন। এরফলে বর্তমানে পরিবেশের ক্ষতি ও সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি এসব বর্জ্যের দুর্গন্ধে দীর্ঘ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags:

oceantimesbd.com