চট্টগ্রামের উপকূলে পাঁচ বছরে লাগানো হবে সোয়া তিন কোটি গাছ


চট্টগ্রাম উপকূলীয় ভূমি রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে গাছ লাগিয়ে সুরক্ষা দেওয়াল বানাতে চায় বন বিভাগ। এজন্য পুরো উপকূল সবুজে ভরপুর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে উপকূলে তিন কোটি ১৫ লাখ গাছ রোপণ করা হবে। চার উপজেলায় জেগে ওঠা উপকূলীয় নতুন চরেই এ গাছগুলো রোপণ করা হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। এর মধ্যে নিয়মিত বনায়নের অভাবে ১৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধেই বনায়নের চিহ্ন পাওয়া দুষ্কর। যেখানেই বনায়ন নেই সেখানেই তীব্র ভাঙনের শিকার হয়েছে উপকূলীয় বাসিন্দারা। প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে লোকজন। বেড়িবাঁধগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখবাল করলেও এসব বেড়িবাঁধে বনায়ন করে থাকে বনবিভাগ।

এদিকে ২০১৭ সালের ২ জুলাই সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সচিবদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী উপকূলে বনায়নে জোর দিয়েছিলেন। বৈঠকে সচিবদের উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ১৭ নির্দেশনায় বঙ্গোপসাগরের এক হাজার ৭৩৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘মেরিন প্রটেকটেড এরিয়া’ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেখানে বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন, অংশীদারিত্বমূলক ব্লক বাগান ও স্ট্রিপ বাগান সৃজনের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম জেলায় বাঁশখালী উপজেলার ৩২ কিলোমিটার, সীতাকুণ্ড উপজেলার ৩৩ দশমিক ৬২ কিলোমিটার, সন্দ্বীপ উপজেলার ৫৮ কিলোমিটার, মীরসরাই উপজেলার ৩২ দশমিক ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকা অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে।

এছাড়া শহর উপকূলের পতেঙ্গা, কাঠগড় ও আনোয়ারা উপজেলা দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে। কক্সবাজারের চকরিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া উপকূলের মানুষ সারাক্ষণ পানি আতঙ্কে থাকেন। সবুজ-বেষ্টনীর নিরাপত্তা না থাকায় অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় উপকূলে আঁছড়ে পড়ে বঙ্গোপসাগরের বড় ঢেউ। এতে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন উপকূলবাসী।

উপকূলীয় এলাকায় জেগে উঠা চরে ১৯৬৫ সালে বনায়ন শুরু হয়। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা থেকে উপকূলীয় এলাকার জানমাল রক্ষায় ধাপে ধাপে কয়েকটি প্রকল্পে বনায়ন হয়েছিল। কিন্তু সৃজন করা বাগানগুলো বেশিরভাগই বনদুস্যরা উজাড় করেছে। উপকূলে বেশিরভাগ বৃক্ষনিধন হয়েছে বাঁশখালীতে। যে কারণে উপকূলে দৃশ্যমান বাগান কমেছে। এবার নতুন করে আবারও বাগান সৃজনের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীর বাইরে আরও দুই হাজার একর চর জেগে উঠবে। সেখানেও নতুন করে বনায়ন করা হবে। এছাড়াও সন্দ্বীপ, উড়িরচর, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড ও বাঁশখালীতে আগামী পাঁচ বছরে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর চর জাগবে।

প্রতি হেক্টরে চার হাজার ৫০০ চারা রোপণ করা হয়। সে হিসেবে তিন কোটি ১৫ লাখ চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, সন্দ্বীপ ও উড়িরচর উপকূলে প্রধান প্রজাতি হিসেবে কেওড়া এবং অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে বাইন, গেওড়া গাছ রোপণ করা হবে।

বাঁশখালীতে প্রধান প্রজাতি হিসেবে বাইন এবং অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে কেওড়া ও গেওড়া রোপণ করা হবে। সমুদ্র উপকূলের অবস্থানুসারে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়।

গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম উপকূলে প্রায় এক হাজার ৫০০ হেক্টর বনায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মীরসরাই উপকূলে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১০০ হেক্টর, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২০০ হেক্টর, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১০০ হেক্টর বনায়ন করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের উপকূলীয় বনের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, ‘মীরসরাইয়ে গত তিন বছরে সুপার ডাইকের বাইরে প্রতি বছর বাগান করেছি। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই গাছগুলো দৃশ্যমান হবে। এছাড়াও চার উপজেলার সমুদ্র উপকূলে নতুন চরে বনায়ন হচ্ছে।

গত পাঁচ বছরে এসব এলাকায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর বনায়ন হয়েছে। তিনটি ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় নিয়ে এ বাগান সৃজন করা হয়। উপকূলে বাগান সৃজনের কারণে দুটি উপকার পাওয়া যায়। ভূমি রক্ষা ও সুরক্ষা দেওয়াল তৈরি হয়। সরকার উপকূলে যে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে তা রক্ষা করবে এসব বাগান। গাছ কর্তন বন্ধ হলে সবুজে ভরপুর হবে পুরো উপকূল।

সূত্র: জাগোনিউজ

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com