‘ড্রেন নয়, ব্রেন পরিষ্কারই এনে দিতে পারে পরিবর্তন’

পানির অপর নাম জীবন। একটি প্রাণী বেঁচে থাকার সকল উপাদান থাকে পানিতে। তবে সাধারণ পানি লবণাক্ত না হলেও, সমুদ্রের পানি লবণাক্ত তা সকলেরই জানা। সমুদ্রের পানিকে বাষ্পায়িত করা হলে যে অধঃক্ষেপটি থেকে যাবে সেটি হচ্ছে খাবার লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড। মূলত সমুদ্রের পানিতে যেকোনো উপাদানের তুলনায় এই সোডিয়াম ও ক্লোরিন এর সংখ্যা বেশি তাই সমুদ্রের পানি লবণাক্ত।

মানুষ, প্রাণী, সামুদ্রিক উদ্ভিদ, সামুদ্রিক প্রাণী সকলের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদানই সমুদ্রে পাওয়া যায়। এমন কি সমুদ্রে গোল্ড বা সোনার মতন উপাদানও পাওয়া যায়। এক কথায় সমুদ্রে নেই এমন উপাদান পাওয়া বিরল। পুকুর, নদী-নালা, খাল, ড্রেন বা পানিবাহিত যেকোনো জায়গায় শেষ পরিণতি হচ্ছে সমুদ্র।

বর্তমানে মানব সৃষ্ট বিভিন্ন রাসায়নিক সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে এক পর্যায়ে সমুদ্র পতিত হয়। তাছাড়াও পৃথিবীর বাইরে যদি কোন বিকিরণ বা বিক্রিয়া হয় সেখানে সৃষ্ট পদার্থগুলো এসেও এই সমুদ্র পতিত হয়। পৃথিবীর ৭৫% জায়গা দখল করে আছে সমুদ্র। তাই পৃথিবীর বা তার বাইরের সকল পদার্থই এসে জমা হয় এই সমুদ্রে। যার ফলে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে সমুদ্রের লবণাক্ততা।

আন্তর্জাতিক পানি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন মুন্না র সাথে কথা বললে তিনি বলেন “ড্রেন নয়, ব্রেন পরিষ্কারই এনে দিতে পারে পরিবর্তন।”কারণ পানিবাহিত সকল জায়গার শেষ পরিণতি হল সমুদ্র। মানবসৃষ্ট দূষণের কারণেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের সমুদ্র। তাই সমুদ্র কে বাঁচাতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের ব্রেনের পরিবর্তন দরকার।

তাছাড়াও তিনি আরো বলেন পৃথিবীতে সকল কিছুরই উপকারী দিক যেমন আছে ঠিক তেমনি আছে অপকারী দিক। পৃথিবীর তাপমাত্রার প্রতিনিয়ত বাড়ার কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রাও বেড়ে চলেছে। সাধারণত বৃষ্টির পানি সমুদ্রের পানিতে পড়ার ফলে সমুদ্রের পানি তার অধিক লবণাক্ততার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।

কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর তাপমাত্রা অত্যাধিক হারে বাড়ার কারণে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে যার ফলে সমুদ্রের লবণাক্ততা প্রতিনিয়ত বাড়ছে আর সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন সমস্যার।

এছাড়াও উনার সাথে কথা বলে আরো জানা যায় যে, সমুদ্রের লবণাক্ততা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ে চলেছে ক্ষতিকর পদার্থের আধিক্য।যেমন:- আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, লেড সহ নানা ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ। যা মানবজীবনে জীবনে ব্যাপক ক্ষতি করছে। এ সকল ক্ষতিকর পদার্থ সামুদ্রিক মাছের সাথে মিশে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, যার কারণে সৃষ্টি হয় ক্যান্সারের মতন মরণব্যাধি অসুখ। এমনকি এ সকল ক্ষতিকর পদার্থের কারণে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে যার প্রভাব পড়ছে আমাদের জলবায়ুতে।

এক কথায় আমাদের পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে বাঁচাতে হবে আমাদের সমুদ্রকে। আর এক মাত্র আমাদের মনোভাব পরিবর্তনই এনে দিতে পারে আমাদেরকে সুন্দর সমুদ্রে ঘেরা পৃথিবী।

লেখক: অধ্যাপক ও সভাপতি, ওশানোগ্রাফি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শ্রুতিলিখন : সানাজানা তাসফিয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , ,

oceantimesbd.com