ওশানটাইমস ডেস্ক : ২ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ১০:০৭:০১
চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে পানি দূষণে জাটকাসহ নির্বিচারে মারা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণী। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গার কল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পানিতে মিশে দূষণের সৃষ্টি করেছে দাবি স্থানীয় জেলেদের।
পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে মৎস্য বিজ্ঞানীরাও প্রাথমিক পর্যায়ে এর সত্যতা পেয়েছেন। তারা বলছেন, নদী দূষণ বন্ধ করা না গেলে আগামীতে মেঘনায় ইলিশসহ সব মাছের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘুরে ঘুরে উড়ে উড়ে মনের আনন্দে উদরপূর্তি করছে এক ঝাঁক কাক, তবে কোনো অনুষ্ঠানের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট নয়। মেঘনা নদীর তীরে মরে পড়ে থাকা মাছ খাওয়ায় মেতে উঠেছে তারা।
শনিবার (১ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের বাবু বাজার এলাকার মেঘনা নদীর তীরে।
সম্প্রতি ওই ইউনিয়নে মেঘনার পানি দূষণের ফলে বাবু বাজার, ইস্পাহানির চর, গজারিয়া, ষাটনল, সটাকি, মহনপুর, এখলাসপুরসহ প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে নদীর সকল মাছ মরে ভেসে উঠেছে তীরে। জাটকা, পোয়া, বেলে, চেউয়া, চিংড়ি, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ নদীতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনাসহ বেঁচে নেই কোনো জলজ প্রাণী। নদীর তীরে পড়ে থাকা এসম মাছ পচে, গলে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে। দুগন্ধের পাশাপাশি কালচে বর্ণ ধারণ করে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে নদীর পানি।
মতলব উত্তর উপজেলার বাবু বাজার এলাকার জেলেরা বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য মেঘনা নদীতে ছড়িয়ে পড়ায় নদীতে থাকা সব মাছ মরে তীরে ভেসে উঠেছে। গত কয়েক দিন ধরে শতশত মানুষ মৃত মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক মাছ নদীর তীরে পচে গন্ধ চড়াচ্ছে। কাক, চিল খাচ্ছে এসব মাছ। সরকার ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাটকা রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অথচ পানি পচে গিয়ে জাটকাসহ সকল মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষে আমরা কী ধরবো নদীতে!
শনিবার দুপুরে গুণাগণ পরীক্ষায় নদীর পানি সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মেজবাবুল আলম। দূষণের কারণে পানিতে অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় মাছ মরে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
পানি দূষণের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে কল-কারখানার বর্জ্য দায়ী বলে মনে করছেন তারা। উচ্চতর পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে দূষণের মূল কারণ জানা যাবে বলে জানান তিনি। তবে সহসায় দূষণরোধে স্থায়ী সমাধান না করা গেলে চাঁদপুরে ইলিশের উৎপাদন ব্যহত হবে বলে মনে করছেন তিনি।
বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আগেই মাছের অন্যতম প্রাকৃতিক ভাণ্ডার মেঘনা নদী দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা জেলে পল্লীর বাসিন্দাদের। এতে করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বেঁচে থাকবে তাদের জীবিকা আহরণের উৎসটি।
সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।
Tags: জলজ প্রাণী, ঢাকা, নদী দূষণ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মেঘনা নদী
For add