বন ধ্বংস করে মাছের ঘের, বসতবাড়ি


পটুয়াখালীর উপকূলীয় কলাপাড়া উপজেলায় মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের সাপুড়িয়া খালের দুই পাড়ের বন ধ্বংস করে মাছের ঘের তৈরি করা হচ্ছে। আবার কেউ বসতঘর বা পুকুর করেছেন। খালের তীর ঘেঁষে, বন বিভাগের চিহ্নিত গাছসহ চারদিকে মাটির বাঁধ দিয়ে একাধিক মাছের ঘের তৈরির কাজ চলছে। বন বিভাগ ও ভূমি কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় স্থানীয় লোকজন বন ধ্বংস করে এভাবে মাছের ঘের করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের মধুখালী সেতুর নিচ দিয়ে বয়ে গেছে সাপুড়িয়া খাল। উপকূলীয় এলাকার প্রবহমান এই খালের দুই পাড়েই রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ। বাঁধ থেকে খালের তীরবর্তী এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে বনের সৃষ্টি হয়েছে। এই বনে রয়েছে কেওড়া, ছইলা ও কিছু বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, ‘প্রবহমান খালের তীরভূমিতে এভাবে কেউ বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের নির্মাণ করতে পারেন না। এটা আইনিভাবে বৈধ নয়।’

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, খালের দুই পাড়ে বসতঘর নির্মিত হয়েছে। সেতুসংলগ্ন খালের পূর্ব পাড়ে দক্ষিণে খালের তীরভূমি ঘেঁষে উঁচু বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করা হয়েছে। দক্ষিণে এগোলে একইভাবে আরও কয়েকটি খালের তীরভূমি ঘেঁষে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করার কাজ চলতে দেখা গেছে। বসতঘর ও মাছের ঘের করতে গিয়ে বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

স্থানীয় হাসান খান নামের এক ব্যক্তি মধুখালী সেতুসংলগ্ন খালের পূর্ব পাড়ে দক্ষিণে খালের তীরভূমি ঘেঁষে উঁচু বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করেছেন। এভাবে খালের তীরভূমি ঘেঁষে ঘের করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এই জমি তার রেকর্ডীয় বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ১৮৮৩-৮৪ সালে এই খালের জমি কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। ১৯১৭ সালে ওই জমি তাঁরা কিনে নিয়েছেন। তাঁদের রেকর্ডীয় জমিতে মাছের ঘের করছেন। কৃষিজমি না হলেও ভূমি কার্যালয় থেকে ওই জমি কৃষিজমি দেখানো হয়েছে।

এই ঘের থেকে একটু দক্ষিণে দেখা যায়, নতুন করে খালের পাড় ঘেঁষে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। এখানে ঘের হবে। স্থানীয় লোকজন জানান, এলাকার শাহীন হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি ঘেরটি করছেন। তিনিও তাঁর রেকর্ডীয় জমিতে এই ঘের করছেন বলে দাবি করেছেন।

এদিকে খালের পশ্চিম পাশে বেড়িবাঁধের বাইরে খালের তীরভূমি বন এলাকায় বেশ কিছু বসতঘর উঠেছে। একটি বসতঘরের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম জানান, এই এলাকা একসময় জঙ্গল ছিল। এখানে তাদের ১৫ শতাংশ রেকর্ডীয় জমি রয়েছে এবং সেভাবেই তারা বসতঘর করে বাসিন্দা হয়েছেন। পাশের ফেরদৌস গাজীর দাবি, এখানে তার ৩৬ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। গাছ কেটে বন ধ্বংস করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেরদৌস গাজী বলেন, আসলে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। রাতের আঁধারেও কিছু লোক গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

মাছের ঘের করা প্রসঙ্গে মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, আসলে কৃষিজমি হিসেবে ওই জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

তবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি তার নজরে এসেছে। এর আগেও একইভাবে ওই এলাকায় বন থেকে গাছ কাটার ঘটনায় বন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com