অর্থনৈতিক মূল্যায়নে সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীরের গুরুত্ব

একটি প্রবাল প্রাচীর হল একটি জলের নিচের বাস্তুতন্ত্র যা রিফ-বিল্ডিং প্রবাল দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। প্রাচীরগুলি ক্যালসিয়াম কার্বনেট দ্বারা একত্রে থাকা শত শত প্রবাল পলিপের উপনিবেশগুলির দ্বারা গঠিত। এরা শক্ত ও নরম ২ প্রকারের হয়। প্রবাল প্রাচীরগুলিকে সমুদ্রের ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট হিসাবেও বিবেচনা করা হয়। সমুদ্রের পৃষ্ঠের মাত্র ১% এরও কম দখল করে যা ২৫% সামুদ্রিক প্রজাতির নার্সারি গ্রাউন্ড এবং ৩৩% সমস্ত পরিচিত মাছের প্রজাতির বাসস্থান। বেশির ভাগ প্রবালই এত রঙিন এবং আকর্ষনীয় আকৃতির যে কাউকে মোহিত করার জন্য যথেষ্ট। এগুলি সমুদ্রের অগভীর জলে পাওয়া যায় এবং দৃশ্যত উদ্ভিদের মতো দেখায় তবে প্রকৃতপক্ষে, তারা প্রাণী কারণ তারা নিজেরাই তাদের খাবার তৈরি করতে পারে না।

বাংলাদেশে, বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রবাল জন্মে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে মোট ৬৬ টি প্রবাল প্রজাতি রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৯টি জীবাশ্ম প্রবাল, ৩৬টি জীবন্ত প্রবাল এবং বাকিগুলি অক্টোকোরালিয়া (নরম প্রবাল) এর ৬টি পরিবারের অধীনে। আপনি যদি কখনও সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেন তবে আপনি এই দ্বীপের তীরে প্রচুর পাথর লক্ষ্য করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, সেই শিলাগুলি প্রবালের জীবাশ্ম, মৃত প্রবালের চূড়ান্ত রূপ।

সূত্র: Reef Resilience Network

প্রবাল প্রাচীরগুলি বিশ্বের উপকূলরেখার ১/৬ অংশকে ঝড় এবং বিধ্বংসী তরঙ্গ ক্ষয় থেকে সুরক্ষা প্রধান করে। প্রাচীরগুলি ঢেউয়ের বিশাল শক্তিকে হ্রাস করে এবং উপকূলীয় ক্ষয়,জলমগ্নতা এবং উপকূলের উপকূলীয় সম্পত্তির ক্ষতি হ্রাস করে। উপকূলীয় অঞ্চলের সুরক্ষায় নিঃসন্দেহে একটি বাঁধ বা পাড়ের মতো জল নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি করতে প্রচুর অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন,তবে প্রবাল প্রাচীরগুলি কোনও ব্যয় ছাড়াই দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রাকৃতিক রক্ষাকারী হিসাবে কাজ করে।

এমনকি প্রবাল প্রাচীরগুলিকে সাধারণত সমুদ্রের ওষুধের কারখানা হিসাবে বিবেচনা করা হয়,কারণ বেশ কয়েকটি প্রবাল জীবাণু সংক্রমণ, ক্যান্সার, ভাইরাসজনিত রোগ, আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য রোগের জীবনরক্ষাকারী ওষুধ তৈরির উৎস হিসাবে পরিচিত। বিশ্বে অর্ধ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ খাদ্য, আয় এবং সুরক্ষার জন্য প্রাচীরের উপর নির্ভরশীল। মাছ ধরা, ডাইভিং এবং প্রাচীরের কাছাকাছি স্নরকেলিং স্থানীয় ব্যবসায় কয়েক মিলিয়ন ডলার যোগ করে। প্রবাল প্রাচীরগুলি অত্যন্ত উৎপাদনশীল যা বাস্তুতন্ত্র এবং মানুষকে অনেক পরিষেবা প্রদান করে। এভাবে দেশ ও বিশ্বের অর্থনীতিতে খুব গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দুর্ভাগ্যবশত, সেন্ট-মার্টিন প্রবাল প্রাচীর বাস্তুতন্ত্র মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন। এই দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা জেলে। তারা মাছ ধরতে গিয়ে নৌ-চলাচল, মাছের জাল, পায়ে হাটা বিভিন্ন ভাবে প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস করছে। প্রধানত প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাছ ধরা, নৌকা নোঙর করা এবং পর্যটকদের দ্বারা ফেলে দেওয়া বর্জ্য। একটি জরিপে দেখা গেছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ৬৭ শতাংশ প্রবাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মানবসৃষ্ট হুমকি বন্ধ করা না হলে বাকিগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তাই কার্যকরভাবে একটি প্রবাল প্রাচীর রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই সমস্যাগুলি কী এবং সেগুলি কোথায় তা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী একটি ব্যবস্থাপনা স্থাপন করা এবং ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা নিরীক্ষণের মাধ্যমে প্রবাল প্রাচীর রক্ষা করতে হবে। তাই প্রতিটি জনগন যেন নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে প্রবাল প্রাচীর রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: ,

সব সংবাদ

For add

oceantimesbd.com