মানুষের জীবন রক্ষায় অনন্য ভূমিকা রাখে “রাজকাঁকড়া”

IUCN Species Survival Commission (SSC) তথা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার এর স্পিসিস সারভাইভেল কমিশন বিশ্বব্যাপী আমাদের সামুদ্রিক ইকোসিস্টেম এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জীবন্ত জীবাশ্ম খ্যাত হর্সশো ক্র্যাব (রাজকাঁকড়া) ।

মানুষের জীবন রক্ষায় অনন্য ভূমিকা রাখা এই প্রাণীটি সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতার কারণে আমরা যত্রেতত্রে এদের ধ্বংস করছি । অশ্বক্ষুরের ন্যায় দেখতে উপবৃত্তাকার এ কাঁকড়াটি হলো Horseshoe Crab লিমুলাস যা “রাজ কাঁকড়া” নামে স্থানীয়ভাবে অনেকের কাছে পরিচিত।

এরা প্রধানত অগভীর সমুদ্র ও নরম বালি বা কাদা সমৃদ্ধ সমুদ্রতলে বাস করে। প্রজননের সময় এরা ম্যানগ্রোভ উপকূলে মাইগ্রেট করে। বিশেষ করে ভরা পূর্ণিমায় সৈকতের কাছাকাছি জোড়ায় জোড়ায় ও দলে দলে বেশী দেখা যায়।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ডাইনোসর পৃথিবীতে আসার প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে লিমুলাস বা হর্সশো ক্র্যাব এর আগমন এবং কোন রকম বিবর্তন ছাড়াই টিকে আছে এ সামুদ্রক প্রাণী, যার কারণে এদের লিভিং ফসিল বাঃ জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়।

পৃথিবীতে বর্তমানে চার প্রজাতির হর্সসু ক্র্যাব পাওয়া যায় যাদের তিন প্রজাতি এশিয়াতে পাওয়া যায় আর আমাদের বাংলাদেশের উপকূলে তাদের দুইটি প্রজাতি দেখা যায় বলে বিজ্ঞানীরা প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিভিন্ন জার্নালে উল্লেখ করেছেন।

এদের বিশেষে বৈশিষ্ঠের মধ্যে অন্যতম হল রক্তের রং নীল এবং ফার্মাসিউটিকেল পার্সপেক্টিভে এ রক্ত অত্যন্ত মূল্যবান। এদের রক্তে আয়রনের পরিবর্তে তামা বা কপার থাকে যার জন্য এদের রক্তের রং নীল হয় এবং এদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের (Hemoglobin) পরিবর্তে হিমোসায়ানিন (Hemocyanin) থাকে যার কারিশমায় রাজকাঁকড়ার রক্তের শ্বেত কনিকা (amebocytes) যে কোনও ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত পদার্থ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। এ কারণে এরা মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে তাদের বংশবিস্তার রক্ষা করতে পেরেছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। নীল রক্তের সংস্পর্শে ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া কার্যকারিতা হারায়। নীল রক্তের অসাধারণ ক্ষমতার কারণে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিশেষ করে ভেকসিন তৈরিতে এদের রক্তের গুরুত্ব অপরিসীম।

হর্সশো ক্রেবের দেহের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে মোট দশটি চোখ যাদের একটির মাধ্যমে তারা অতিবেগুনী রশ্মি সনাক্ত করতে সক্ষম বলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন এবং রাজকাঁকড়ার চোখের উপর গবেষণা করে জন হপকিন্স স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ড. এইচ কে হার্টলাইন  ১৯৬৭ সনে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরুস্কার লাভ করেন। ১৯৫০ সালের দিকে কেফার হার্টলাইন বিশ্লেষণ রাজকাঁকড়ার বিস্ময়কর চোখ নিয়ে গবেষণায় দেখিয়েছিলেন কীভাবে ভিজ্যুয়াল কোষ থেকে প্রাথমিক সংকেতগুলি স্নায়ু কোষের নেটওয়ার্কে প্রক্রিয়া করা হয়।

তিনি আরও দেখিয়েছিলেন যে যখন একটি কোষ উদ্দীপিত হয়, তখন আশেপাশের কোষ থেকে আসা সংকেতগুলি নিরুদ্ধ হয়ে পরে যার কারণে কন্ট্রাস্টের ধারণা বুঝা খুব সহজ হয়।

২০২১-২২ সালে Bangladesh Oceanographic Research Institute এর মহাপরিচালক বেলাল হায়দার পারভেজ ও সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার তরিকুল ইসলাম এর সার্বিক সহযোগিতায় চবি ওশানগ্রাফি বিভাগের মাস্টার্সের থিসিস স্টুডেন্ট  মহিদুল আলম ফয়সাল সহ আমাদের উপকূলীয় এলাকায় এদের Occurance and Distribution এর উপর কিছু সার্ভে ও নমু্না সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করি। সংগৃহীত নুমুনার (প্রায় ১২০টি) মর্ফোমেট্রিক পরিমাপের কাজ শেষে একটা পাব্লিকেশনের ড্রাফট ও রেডি করে। এরি মধ্যে নমুনা থেকে ব্লাড সংগ্রহ করে এনআইবিতে DNA barcoding and DNA sequencing এর পাঠানো হয়।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com