আজ কোস্ট গার্ড দিবস

উপকূলীয় ও সমুদ্র নিরাপত্তা বাহিনী কোস্টগার্ডের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দিবস আজ। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যথোপযুক্ত সামুদ্রিক আইন-শৃংখলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে কোস্ট গার্ডের ভূমিকা পালন করে আসছিল। বেসামরিক প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনাধীন আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আওতাভূক্ত না হওয়ায় উপকূলীয় এলাকার জানমালের নিরাপত্তাসহ সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে একটি পৃথক সামুদ্রিক আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যার ফলশ্রুতিতে “কোস্ট গার্ড এ্যাক্ট ১৯৯৪” জাতীয় সংসদে পাশ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড গঠন করা হয়। ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারীতে একটি আধা সামরিক বাহিনী হিসাবে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড যাত্রা শুরু করে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অদ্যাবধি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানা, তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চল এবং বিভিন্ন নদ-নদীতে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডে ৯৮ টি আধুনিক ও দ্রুততর জলযান, যা অত্র বাহিনীর অপারেশনাল কর্মকান্ডের সাফল্যকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

এ বাহিনীর কার্যাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় জলসীমা ও উপকূলীয় অঞ্চলে জলদস্যুতা দমন, মাদকদ্রব্য পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধ, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা প্রদান, প্রাকৃতিক দূর্যোগকালে উপকূলীয় এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ পরিচালনা এবং তেল, গ্যাস ও বনজ সম্পদ রক্ষাসহ উপকূলীয় পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ।

সমুদ্র সম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জলসীমায় কোস্ট গার্ডের সক্রিয় উপস্থিতি ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের শুভ সূচনা হয়। বঙ্গোপসাগর বিধৌত নদী-মাতৃক বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন বিভিন্ন নদ-নদী এবং বিশাল সমুদ্রের নিজস্ব এলাকা ব্যবহারের মধ্যে নিহিত।

বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ৯০ ভাগেরও বেশী পণ্যের আমদানী ও রপ্তানী সমুদ্র পথে হয়ে থাকে। তাই আমদানী ও রপ্তানী কাজে ব্যবহৃত সকল প্রকার দেশী ও বিদেশী জাহাজ সমূহের নদী ও সমুদ্রপথে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে তথা দেশের অর্থনীতির প্রবাহ অব্যহত রাখতে কোস্টগার্ডর সক্রিয় ভূমিকার কোন বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে সমুদ্রতীর হতে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত টেরিটোরিয়াল সী এলাকা এবং ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত EEZ (Exclusive economic zone) এর সকল অধিকার সমূহ সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

এদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণের মূল জীবিকা এবং রপ্তানী আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া বঙ্গোপসাগর প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ও অন্যান্য বহু অনাবিষ্কৃত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ সকল মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের ভূমিকা রয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান ও দীর্ঘ ৭১০ কিঃ মিঃ সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল থাকায় সমুদ্র ও নদী পথে চোরাচালান বেশী হয়ে থাকে। এসব রোধকল্পে কোস্ট গার্ড সবসময় প্রস্তুত থাকে।

তাছাড়া দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্র বন্দরে আগত বিদেশী ও দেশী জাহাজসমূহের নিরাপত্তা প্রদান, সুবিশাল সুন্দরবনের পর্যটক, মৌয়াল, চিংড়ি চাষী, মাঝি ও অন্যান্য জনগনের নিরাপত্তা প্রদান করে কোস্ট গার্ড দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জম্মলগ্ন থেকে জলোচ্ছ্বাস, ঘূণিঝড়, সুনামি ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় উপকূলীয় জনগনকে সার্বিক সহায়তা এবং ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করে আসছে।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় অত্র বাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্য:

(ক) বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করা;

(খ) যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে সহায়তা করা;

(গ) সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা;

(ঘ) নাশকতামূলক ও সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধ ও দমন করা এবং এতদুদ্দেশ্যে অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা;

(ঙ) বাংলাদেশের জলসীমা দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ বা বাংলাদেশ হইতে অবৈধ গমন প্রতিরোধ করা এবং মানব পাচার প্রতিরোধ করা;

(চ) প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করা এবং দুর্ঘটনা কবলিত নৌযান, মানুষ এবং মালামাল উদ্ধার করা;

(ছ) কোন নৌযান বা উহাতে অবস্থানরত ব্যক্তির ব্যাপারে আদালত বা অন্যবিধ কর্তৃপক্ষের পরোয়ানা বা অন্য কোন আদেশ বলবৎ করা;

(জ) পরিবেশ দূষণকারী কার্যকলাপ অনুসন্ধান এবং উহা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা;

(ঝ) মাদকদ্রব্য পাচার এবং চোরাচালান প্রতিরোধ করা;

(ঞ) অবৈধভাবে মৎস আহরণ প্রতিরোধ করা;

(ট) প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে সতর্কবাণীসহ অন্যান্য তথ্য বেতার বা অন্য কোন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা;

(ঠ) নিয়মিত টহল দেওয়া ও এতদ্সম্পর্কিত দায়িত্ব পালন;

(ড) কর্মরত ব্যক্তিগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; এবং

(ঢ) সময় সময়, সরকার কর্তৃক নির্দেশিত অন্য কোন দায়িত্ব সম্পাদন করা।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags:

oceantimesbd.com