দেশের কৃষি, মৎস্য খাতে অবদান রাখছে ‘হাজীর ভাগনা’ খাল

আশির দশকে নির্মিত সেতুটি সংস্কার না করায় নব্বইয়ের দশকে কাঠের পাটাতন রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায়। পরে সেতু না থাকায় তিন ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষকে বন্যা ও ঝড়বৃষ্টিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৬০০ ফুট দীর্ঘ খালটি নৌকায় পারাপার করতে হতো। বলছিলাম ফুলগাজীর ‘হাজীর ভাগনা’ খালের কথা।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ‘হাজীর ভাগনা’ খালের ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে। সেতুটির নতুন নাম হয়েছে ‘হাজীর ভাগনা-এবিএম মূসা’ সেতু।

জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে সেতুটি পুনর্নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক এবিএম মূসাসহ স্থানীয় পর্যায়ের অনেকে। এ কারণে প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুস সালামের দাদা হাজী ফানাউল্লাহর নামে পরিচিত ‘হাজীর ভাগনা’ সেতুটির নতুন নামকরণ হয়েছে ‘হাজীর ভাগনা-এবিএম মূসা’। ১৪০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন।

সেতুটি বাস্তবায়নের ফলে আমজাদহাটসহ তিন ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ এটির সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। এই খালটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে দেশের কৃষি ও মৎস্য খাতে।

কৃষিতে খালের অবদান

স্থানীয় কৃষকরা জানান, খালের দুই পাড়ে ধান, সরিষা নানা রকম শস্য ফসলসহ শাক সবজি আগে নৌকা করে পারাপার করতে হতো। খালটির কারণে দীর্ঘ পথ ঘুরে ফুলগাজী, মুন্সিরহাট, আমজাদহাট বাজারে নেওয়া হতো উৎপাদিত পণ্য। এখন আর তা করা লাগে না। খুব সহজেই এসব কৃষি পণ্য এখন পরিবহন করা যায়। এতে কৃষি পণ্য পরিবহণ খরচ কমে এসেছে বহুলাংশে। এছাড়াও কৃষকরা হাজীর ভাগনা খাল থেকে সেচ দিয়ে সারা বছরই নানা রকম শাক-সবজি ও ফসল উৎপাদন করছে। এতে কৃষকদের অর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। সেতুটি হওয়ার পর জমির দামও আগে থেকে বাড়ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ রানা বলেন, আমরা আমজাদহাট, জিএম হাটসহ উপজেলাব্যাপী সেচ উপকরণসহ নানারকম বীজ, সার ইত্যাদি বিনামূল্যে দিচ্ছি। সে ধারাবাহিকতায় হাজীর ভাগনা খালের চারপাশে বসবাসরত কৃষকদের মাঝেও বিতরণ করেছি। যেহেতু বর্ষাকালে ওই এলাকায় পানি উঠে সেজন্য আমরা তাদের ভালো মানের বিচ দিয়ে থাকি। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সব সময় ঐ এলাকায় পরিদর্শনে যায়।

মাছের নিরাপদ অবয়াশ্রম

হাজীর ভাগনা খালটি শুধু সম্ভাবনাময় কৃষিতেই নয়, সেতুর নিচের জলাধারটি হতে পারে মাছের নিরাপদ অবয় আশ্রম। স্থানীয়রা জানান, হাজীর ভাগনা খালটিতে সারাবছরই হরেক রকমের সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়। এই খালে মাছ ধরে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের দাবি সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে যদি এই খালে মাছ অবমুক্ত করা যায় তাহলে প্রচুর পরিমাণ মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়াও খালটিতে যদি কয়েকটি নৌকার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ঘুরতে আসা মানুষ আরো আকৃষ্ট হতো।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা উজ্জ্বল বণিক পলাশ বলেন, আমরা ঐ খালটি ইতিমধ্যে পরিদর্শক করেছি। বর্তমানে উন্মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করার কোন প্রকল্প নেই। যদি কোন প্রকল্প আসে তাহলে আমরা ঐ স্থানে পোনা অবমুক্ত করবো।

স্থানীয়দের মতে, এই খালটিতে বড় ধরনের মৎস্য অবয়-আশ্রম তৈরি হবে এবং জলাধারের পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করলে মৎস ও কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com