যে পাড়ায় আজও উচ্চবিত্ত থেকে পানি কিনে খেতে হয় নিম্নবিত্তদের

দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিশুরা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়ায় সুপেয় পানি সংকট এখনো কাটেনি। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। দুই-তিন কিলোমিটার দূরে ছরা থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। তাও আবার বিশুদ্ধ না। এ সময় অসচ্ছল পরিবারগুলো সচ্ছল পরিবার থেকে মাসিক হারে পানি কিনে নিয়ে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চালায়। তাই এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলায় ৪টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়া রয়েছে। পাড়াগুলো হলো মিরসরাই সদর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া, খৈয়াছরা ইউনিয়নের নাপিত্তছরা, করেরহাট ইউনিয়নের সাইবেনীখিল ও নলখো। এসব পাড়ায় ৩৫০টি পরিবারে প্রায় আড়াই হাজার ত্রিপুরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস করছে। কিন্তু পাড়াগুলোতে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। গুটি কয়েক পরিবারের নলকূপ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কুয়া ও সচ্ছল পরিবারগুলো থেকে পানি কিনে ব্যবহার করে।

নাপিত্তাছরা ত্রিপুরা পাড়ার গোত্র প্রধান সুমন ত্রিপুরা জানান, সরকারিভাবে দুই পাড়ার জন্য একটি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপিত হলেও সেটি এখন বিকল। দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় এটি ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে গেছে। এখন ছড়ার পানি তাদের একমাত্র ভরসা। যোগাযোগ ব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। সমতলের সঙ্গে সরাসরি কোনো রাস্তা না থাকায় পাহাড় ও ছড়ার ধার দিয়ে কোনো রকমে যাতায়াত করে তারা।

পাড়ার চন্দন ত্রিপুরা বলেন, বৈরি আবহাওয়ায় দুই পাড়ার কারোরই চোখে ঘুম হয় না। পাহাড়ে প্রাণহানীর ঝুঁকি নিয়েও পড়ে থাকতে হয়। ১০ নম্বর বিপদ সংকেত দেখালে আমরা অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় থাকি।

মিরসরাই সদর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়ার স্থানীয়রা জানানা, ওই পাড়ায় ১৩০টি পরিবারে প্রায় ৭০০ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস করছে। চার বছর আগে ওই পাড়ায় উপজেলা পানি ব্যবস্থাপনা ফোরামের সভাপতি ডা. জামশেদ আলমের উদ্যোগে ১৩টি কুয়া স্থাপন করা হয়। কিন্তু ১৩টি কুয়ার মধ্যে তিনটিতে পানি পাওয়া যায়নি। পরে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর থেকে একটি রিং টিউবওয়েল দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ওই পাড়ায় তীব্র বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা সুরেন্দ্র ত্রিপুরা।

করেরহাট ইউনিয়নের সাইবেনীখিল পাড়ায় ৮০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোকজন বসবাস করে। ওই পাড়ায় ৩৫ জনের কাছে টিউবওয়েল থাকলেও বাকিদের কাছে নেই। তাই যাদের কাছে টিউবওয়েল রয়েছে তাদের কাছ থেকে মাসিক ৫০-১০০ টাকায় বিশুদ্ধ পানি কিনে জরুরি প্রয়োজন মেটানো হয় বলে জানিয়েছেন ওই পাড়ার বাসিন্দা ঊষা ত্রিপুরা।

এছাড়া ওই ইউনিয়নের নলখো পাড়ায় ১১০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়া রয়েছে। পরিবারগুলোয় প্রায় ৭০০ মানুষ বসবাস করে। নলখো পাড়ায় ৪৫-৫০টি পরিবারের মধ্যে নলকূপ রয়েছে। এছাড়া করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নের প্রতিষ্ঠা করা ‘ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ একটি গভীর নলকূপ (ডিপ টিউবওয়েল) স্থাপন করায় খাওয়ার জন্য পাড়ার লোকজন ওই পানি ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা অনিল ত্রিপুরা।

আরও জানা গেছে, অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবার পাহাড়ি ছড়া থেকে পাত্রে পানি সংগ্রহ করে। পরে ওই পানি খাওয়াসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে তারা। এতে তারা অনেক সময় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়।

মিরসরাই উপজেলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ফোরামের সহ-সভাপতি সুরেন্দ্র ত্রিপুরা ওশান টাইমসকে জানান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়ায় কোনোভাবে বিশুদ্ধ পানি সংকট কাটছে না। পানি নিয়ে নিয়মিত মিরসরাই সদর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া পাড়ায় স্থানীয়দের মাঝে ঝগড়া হয়। তাই সরকারিভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়াগুলোয় গভীর নলকূপ স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কেএম সাঈদ মাহমুদ ওশান টাইমসকে বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়াগুলোয় চাহিদা অনুসারে ধীরে ধীরে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , ,

oceantimesbd.com