দেশে ব্যাঙের ফার্মিং করার কথা ভাবছে বন বিভাগ


ব্যাঙ ছোট্ট ও একটি প্রাণী। কিন্তু মানবজীবনে এই প্রাণির অনেক গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের জন্য ভূমিকা রাখে এই নিরীহ প্রাণিটি। তবে বর্তমানে ব্যাঙের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ (জলাশয় ও উন্মুক্ত প্রাকৃতিক স্থান) কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত কমছে ব্যাঙ। ফলে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার মতো মশাসহ এজাতীয় ক্ষতিকর কীটপতঙ্গবাহিত রোগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি ব্যাঙ তার জীবনে পোকা দমনের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকার বেশি ফসল রক্ষা করে কৃষককে সহযোগিতা করে। কারণ সে প্রতিদিন তার দেহের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন খাবার খায়। যার ৫০ শতাংশের বেশিই থাকে ক্ষতিকর পোকামাকড়।

রবিবার (৭ মে) বিশ্ব ব্যাঙ দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধে এই তথ্য জানানো হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফিরোজ জামান।

এদিকে এই সভায় যোগ দিয়ে বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, বাঘ, ডলফিন, হাতিসহ বিভিন্ন বড় প্রাণী রক্ষায় যেমন বন বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে, তেমনিভাবে ব্যাঙ রক্ষায়ও শিগগরিই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার এখন কুমির চাষ করে কুমিরের মাংস ও চামড়া রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। যেহেতু বিশ্ববাজারে ব্যাঙের চাহিদা আছে তাই এটিকে ফার্মিং করার বিষয় ভাবা যেতে পারে।

শিগগিরই ব্যাঙ সংরক্ষণ ও ফার্মিংয়ের বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করে ব্যাঙ চাষ করা যায় কিনা সে বিষয়ে বন বিভাগ কাজ শুরু করবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে র‌্যালির আয়োজন করা হয়। আয়োজনের অংশ হিসেবে তরুণদের ব্যাঙ সম্পর্কে জানাতে ব্যাঙের স্বর নকল করা, ব্যাঙ চেনা, ব্যাঙ বিষয়ক পোস্টার আঁকা, রচনা লিখাসহ আরও নানান প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. এম নিয়ামুল নাসেরের সভাপতিত্বে আলোচনা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এ কে এম মাহবুব হাসান, বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. নুরজাহান সরকার, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু প্রমুখ।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, মশাসহ ক্ষতিকর পোকা নিয়ন্ত্রণে এই প্রাণিটি ভূমিকা রাখলেও জলাভূমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা এবং বিদেশে পাচারের কারণে ব্যাঙ এখন হারানোর পথে। ফলে গ্রাম-শহর সবখানেই বাড়ছে মশাসহ নানান পোকামাকড়ের উৎপাদন। এতে মানবদেহে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার মতো নানান রোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে কৃষকের ক্ষতিও। যা কখনোই কীটনাশক বা ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

ব্যাঙ রফতানির সিদ্ধান্তের সুযোগে ব্যাপকভাবে শিকার করায় প্রাণিটি সবচেয়ে বেশি হুমকিতে পড়েছে বলে জানিয়ে, নিষিদ্ধ থাকা স্বত্ত্বেও এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপনে ব্যাঙ শিকার ও পাচার হচ্ছে বলেও জানান বক্তারা।

উল্লেখ্য, বিশ্বে বর্তমানে ৭ হাজার ৬০৩ প্রজাতির ব্যাঙের অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে ৬২টি প্রজাতির ব্যাঙ। ঢাকা শহরে ১২টি প্রজাতির ব্যাঙের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও বাঁচার মতো যথাযথ পরিবেশ না থাকায় এদের বিলুপ্তির শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্ষুদ্র এই প্রাণিটি সংরক্ষণে মানুষকে সচেতন করতে ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বের ৫৮টি দেশে ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস পালন হয়ে আসছে। বাংলাদেশে ২০১৬ সাল থেকে দিবসটি পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেচার কনজারভেশন সোসাইটি।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , ,

oceantimesbd.com