শুঁটকির গন্ধ শুঁকতে শুঁকতেই দেখতে হবে দুবলার চর

ছবি: ওশানটাইমসবিডি.কম

দুবলার চর বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ। হরিণের জন্য বহুল পরিচিত এই দ্বীপটি। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি ৮১ মাইলের একটি বিচ্ছিন্ন চর- দূবলার চর।

আলোরকোল, হলদিখালি, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা ও মেহের আলি- এই আটটি চর নিয়ে গঠিত দুবলার চর। এই চরটি মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। দুবলার চরে গেলে দেখা যাবে শুঁটকি পল্লি ও কিভাবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

পল্লির ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চারদিকে শুঁটকির গন্ধ নাকে এসে লাগে। গন্ধ সহ্য করেই হাঁটতে হবে আর দেখতে হবে। কিছুদূর গেলেই চোখে পড়বে শুঁটকি বাজার। সেখানেও দেখা যাবে হরেক রকমের শুঁটকির পসরা সাজিয়ে বসে আছে দোকানদাররা। দুবলার চরের শুঁটকি দামেও তুলনামূলক সস্তা আবার সেরা। ঘুরেঘুরে কিনে ফেলা যাবে পছন্দমতো শুঁটকি।

এই চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে চরে লাল বুক মাছরাঙা, মদনটাক পাখির দেখা পাওয়া যায়। পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি আনন্দ উপভোগ করে হরিণ দেখে। এছাড়া চরের চারপাশে পানি থাকায় এখানে নানা প্রজাতির মাছ ও জলজ উদ্ভিদের দেখা যায়।

ছবি: ওশানটাইমসবিডি.কম

আরও দেখা যাবে সেখানকার জনজীবন। সেখানকার মানুষের জীবনধারা কতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ তা অনুধাবন করা যায় সামনে থেকে দেখলে। স্থানীয় অধিবাসীদের মাছ ধরাও দেখা যাবে খুব কাছ থেকে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা ও পূণ্যস্নানের জন্যও দ্বীপটি বিখ্যাত। প্রতিবছর কার্তিক মাসে সেখানে রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০ বছর ধরে এ রাসমেলা চলছে। প্রতিবছর অসংখ্য পুণ্যার্থী রাসপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে ভিড় জমান এই দ্বীপে।

দুবলার চরের রাসমেলায় স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দূর-দূরান্তের শহরবাসী এমনকি বিদেশি পর্যটকেরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে থাকেন। তিনদিনব্যাপী এ মেলায় অনেক বিদেশি পর্যটকও ছুটে আসেন এই চরে।

দুবলার চরের অবস্থান মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের দক্ষিণে। এই চর সুন্দরবনের ৪৫ ও ৮ নম্বর কম্পার্টমেন্টে অবস্থিত।

দেশের যে কোনো স্থান থেকে দুবলার চরে পৌঁছাতে প্রথমে বাগেরহাটে যেতে হবে। বাগেরহাট পৌঁছে বাস অথবা সিএনজি অটোরিকশা করে এই চরে পৌঁছানো যাবে। এছাড়া মোংলা বন্দরে গিয়ে সেখান থেকেও ট্রলার কিংবা লঞ্চ ভাড়া করে যাওয়া যায় এই চরে।

ছবি: ওশানটাইমসবিডি.কম

দুবলার চরের জেলেপল্লীতে বনদস্যুদের উৎপাত ছিল এক সময়, তবে বর্তমানে অনেক কমে এসেছে। বনদস্যুদের উৎপাত ঠেকাতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‍্যাব, পুলিশ ও বন বিভাগের প্রহরীরা থাকলেও সমন্বিত উদ্যোগের অভাব রয়েছে।

তাই নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার করতে দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। মোবাইল নেটওয়ার্ক খুবই কম। এখানে শুধু টেলিটক এর নেটওয়ার্ক আছে। তাই সেখানে যাওয়ার সময় সঙ্গে টেলিটক সিম রাখা শ্রেয়।

মোংলায় পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, পশুর বন্দরে সাধারণ হোটেল আছে পর্যটকদের জন্য। তাছাড়া বাগেরহাটে ধানসিঁড়ি, সুন্দরবন ইত্যাদি মানসম্পন্ন হোটেল ছাড়াও সাধারণ মানের হোটেল আছে।

তো, অদেখা সৌন্দর্য দেখতে চাইলে ঘুরে আসুন দুবলার চরে!

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , ,

সব সংবাদ

For add

oceantimesbd.com