ফুল উৎসবে প্রতিবন্ধী ও এতিমদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করলেন জেলা প্রশাসক

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে পোর্ট লিংক রোড় সংলগ্ন সমুদ্র তীরের পাশে ঘেঁষে উঠা ডিসি পার্কে এতিম ও প্রতিবন্ধি শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ফুল উৎসব। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি শিশু পরিবার, উপলব্ধি এবং সীতাকুন্ড প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রায় দুই শতাধিক শিশু এই ফুল উৎসবে আসেন। এই শিশুদের জন্য এখানে নাগরদোলা, কায়াকিং ও নৌকায় চড়ে বিশাল দিঘীতে ঘূরে বেড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।

ফুল উৎসবে আসা রোকশানা আক্তার নামে এক এতিম শিশুকে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার ইচ্ছা কী?’ উত্তরে বললো, ‘ এরকম ফুল উৎসব কখনো দেখিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই উৎসবের বিভিন্ন স্থীর চিত্র মানুষরা দেখছে তা দেখে খুব ইচ্ছা ছিলো এই উৎসবে আসার। কিন্তু আমার তো বাবা-মা নেই। হাতে কোন টাকাও নেই। তাই বড় হয়ে টাকা উপার্জন করে আমি নিজেই একদিন এই উৎসবে আসবো বলে ধারণা ছিলো। কিন্তু সেই আশা পুরন হয়েছে আজ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক দেওয়া গাড়িতে করে বিনা খরচে এই উৎসবে আসতে পেরেছি। পেয়েছি নতুন জামাও’।

আরও পড়ুন>> সাগর তীরে ফুলের রাজ্য

রোকশানা আক্তার ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক এতিম এই ফুল উৎসবে এসে উচ্ছাসিত হয়েছে। এছাড়া শতাধিক প্রতিবন্ধীও ফুল উৎসবে আসেন। এতিম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মনোমুগ্ধকর সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয় উৎসবে।

সরকারি শিশু নিবাসের নাঈমা বলেন, আমি এখানে এসে অনেকগুলো ফুলের নাম জেনেছি। নৌকায় ঘুড়েছি। সবাই মিলে কায়াকিং করেছি। আমরা অভিভূত।

মাঈনুল ইসলাম নামে হুইল চেয়ারে বসা এক কিশোর বলেন, প্রতিবন্ধীদের কথা কেউ ভাবেন না, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আমাদের জন্য আজকে যে আয়োজন করেছে। এত বিশাল জায়গা জুড়ে শুধু ফুলের বাগান চট্টগ্রামের অন্য কোথাও নেই। আমরা চাই আমরা যেন মাঝে মাঝে আমাদের এসকল এতিম বাচ্চাদের নিয়ে এখানে আসতে পারি। এরকম একটি পার্ক শিশুদের মানসিক বিকাশে দারুণ অবদান রাখবে।

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট-বন্দর পোর্ট লিংক রোড সংলগ্ন ডিসি পার্কে ফুল উৎসবের অষ্টম দিন (শুক্রবার) ফুল উৎসবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এর সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সীতাকুন্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন।

জেলা প্রশাসক জনাব আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, “এসকল পিতৃ-মাতৃহীন এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদেরকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে বাদ দিয়ে কোন ভাবেই সামস্টিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নত বিশ্বে এধরণের শিশুদের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সব জায়গায় এ ধরনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এসকল শিশুদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। আমরা অবশ্যই শিশুবান্ধব ও প্রতিবন্ধীবান্ধব পার্ক হিসেবে এই ডিসি পার্ককে গড়ে তুলব। এবং তারা যেন প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এখানে আসতে পারে এবং খেলাধুলা করতে পারে সে ব্যবস্থা করব।”

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: ,

oceantimesbd.com