লাল কাঁকড়া আর পরিযায়ী পাখির দ্বীপ ‘চর বিজয়’

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভ্রমণের নতুন স্পট ‘চর বিজয়’। লাল কাঁকড়া ও পরিযায়ী পাখিদের মিলনমেলায় জায়গাটি মুখরিত থাকে প্রতিটি মুহূর্ত। কুয়াকাটা সৈকতের ৪০ কিলোমিটার গভীরে জেগে ওঠা চরটিতে প্রতিবছরই পর্যটক বাড়ছে। এতে তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

‘সাগরকন্যা’ কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এ চরের সন্ধান মেলে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসে এর সন্ধান পাওয়ায় নাম রাখা হয় ‘চর বিজয়’।

চরটি বর্ষার ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকে। আবার পানি নেমে গেলে, বিশেষ করে শীত মৌসুমে পুরো দখলে নিয়ে নেয় লাল কাঁকড়া। চরজুড়ে দেখা যায় আট পায়ে ভর করে চলা লাল কাঁকড়ার বিচরণ। এসময় দেখা মেলে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির ওড়াউড়ি। গাঙচিল, চ্যাগা, বালি হাঁসসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি কখনো পানিতে আবার কখনো পুরো চরের আকাশে বিচরণে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় প্রায়ই।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চরটি পুরোপুরি জেগে ওঠার আগে জেলেরা এটাকে ‘ডুবোচর’ নামে চিনতেন। অনেক জেলের কাছে এটি ‘হাইড়ের চর’ নামেও পরিচিত। গভীর সমুদ্রে থাকা জেলেরা একটু প্রশান্তির খোঁজে মাঝে মধ্যে এখানে আশ্রয় নেন।

তবে পর্যটকদের কাছে দ্বীপটি এখন সম্ভাবনাময় একটি ভ্রমণ স্পট হয়ে উঠেছে। কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা একটু কোলাহলমুক্ত পরিবেশের স্বাদ নিতে চলে আসেন এ চরে। চারদিকে সমুদ্র। এর মধ্যে অবস্থান করে বুকভরে প্রশান্তির নিশ্বাস নেওয়া যায়।

চর বিজয়ে প্রথম পা রাখা ১৩ জনের একটি টিমের অন্যতম জল তরণী ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, “২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আমরা প্রথম এ চরে পা রাখি। ডিসেম্বর মাসে এটার সন্ধান পাওয়ায় স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে নামকরণ করা হয় ‘চর বিজয়’। যদিও সবার আগে এ চরের সন্ধান দেন জেলেরা।”

চর বিজয়ের পাশে মাছ ধরছিলেন জেলে দুলাল হওলাদার। তিনি বলেন, ‘চরে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এখানেই আমরা চর জেগে ওঠার আগে মাছ ধরতাম। এখন মাঝে মধ্যে এখানে এসে বিশ্রাম নেই। অনেক লোক আসে এ চর দেখতে।’

ফয়সাল রাব্বি নামের একজন পর্যটক জাগো নিউজকে বলেন, ‘কুয়াকাটায় বেড়াতে এসে যদি চর বিজয়ে না আসতাম তাহলে আমরা অনেক কিছু মিস করতাম। এত সুন্দর পাখি আর কাঁকড়া! মন চাচ্ছে এখানে থেকে যাই। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে টেকসই পরিকল্পনা অনুযায়ী চরটিকে যেন পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হয়।’

আন্ধারমানিক ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএম বাচ্চু জানান, কুয়াকাটায় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘চর বিজয়’। এখানে অসংখ্য লাল কাঁকড়া ও পরিযায়ী পাখির দেখা মিলছে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, চর বিজয় ঘিরে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে যদি আমরা আধুনিকমানের একটি পর্যটনকেন্দ্র করতে চাই তাহলে এটাকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। সেজন্য সবার আগে পরিবেশটাকে রক্ষা করা জরুরি। বর্তমানে চর বিজয়কে পরিযায়ী পাখি, লাল কাঁকড়া ও কচ্ছপের অভয়াশ্রম হিসেবে তৈরি করতে পর্যটকদের আমরা সচেতন করছি। সবার সহযোগিতা পেলে এটিকে একটি নতুন সম্ভাবনাময় ‘পর্যটন স্পষ্ট’ হিসেবে রূপ দেওয়া সম্ভব।

বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, চর বিজয়ের বেশিরভাগ স্থান বর্ষায় তলিয়ে যায়। মাটির প্রলেপ স্থায়ী না হওয়ায় বনায়ন করে রাখা যাচ্ছে না। তবে মাটির প্রলেপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বনায়ন করা হবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটার পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, চর বিজয় কুয়াকাটার অন্যতম একটি ভ্রমণ স্পট। এখানে প্রতিনিয়ত পর্যটকরা ঘুরতে আসছেন। তবে চর বিজয়ে নামতে আমরা তাদের নিষেধ করি। প্রয়োজনে বোট নিয়ে চর ঘুরে দেখা যাবে। সেজন্য আমাদের টহল টিম সার্বক্ষণিক তদারকি করছে।

সূত্র: জাগোনিউজ২৪.কম

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , , , ,

oceantimesbd.com