ওশানটাইমস ডেস্ক : ২৩ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ৮:০১:৫৩
পবিত্র রমজান মাস শেষে শনিবার হয়ে গেলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। এখন চলছে ঈদের ছুটি। অতীতের মতো এবারের ঈদের ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণ করছেন অন্তত ৮ লাখ পর্যটক। তাদের বরণ করে নিচ্ছে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও সাত শতাধিক রেস্তোরাঁ।
পর্যটকরা সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, ইনানী সৈকত, পাটোয়ারটেক, রামুর বৌদ্ধপল্লি, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, সাগরদ্বীপ মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ করছেন। ঈদের আগেই বিনোদনকেন্দ্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ নানাভাবে সজ্জিত করা হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, গত বছর ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসেছিলেন প্রায় ১০ লাখ পর্যটক। তখন হোটেল, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা হয়েছিল প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
এবারের ঈদেও একই রকম পর্যটকের সমাগমের আশা করা হয়েছিল। কিন্তু দেশব্যাপি তীব্র দাবদাহ চলছে। আছে লোডশেডিংও। সবকিছু বিবেচনা করে এবার কক্সবাজারে ঈদের ছুটিতে আট লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঈদের আগেই পাঁচ শতাধিক হোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্টে ৭০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়েছে জানিয়ে আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, আট লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটলে ৫০০-৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি হোটেলের কক্ষ ভাড়া এবং খাবারের অতিরিক্ত মূল্য আদায় বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর থাকতে হবে।
শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সৈকত এলাকার ৫০টির বেশি গেস্টহাউস, কটেজ, হোটেল-রিসোর্টে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। বর্তমানে কোনো হোটেলে অতিথি না থাকলেও ঈদের দিন থেকে পর্যটকের সমাগম আশা করছেন অনেকে।
কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ঈদের প্রথম দিন সৈকত ভ্রমণ করেছেন প্রায় ১২ হাজার পর্যটক। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে টানা পাঁচ দিন প্রতিদিন এক লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। এরইমধ্যে আবাসিক হোটেল ও গেস্টহাউস, রিসোর্টের ৭০ শতাংশ কক্ষের আগাম বুক হয়ে গেছে। অবশিষ্ট কক্ষ শনিবার দুপুরের মধ্যে মধ্যে বুকড হয়ে গেছে। পবিত্র রমজান মাসে পর্যটক টানতে কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ঈদের এই ছুটিতে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসের দৈনিক পর্যটকের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজার। এ সময় হোটেল-রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট নানা খাতে ব্যবসা হবে অন্তত ৪০০ কোটি টাকার। তবে তীব্র দাবদাহ ও ঘন ঘন লোডশেডিং পর্যটকদের ভোগান্তির কারণ হতে পারে।
শুক্রবার দুপুরে সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলী ও সি-গাল পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে, পুরো সৈকত ফাঁকা। কয়েক কিলোমিটার সৈকতে শতাধিক মানুষের বিচরণ। তারা স্থানীয়। তবে সৈকতে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য দ্রুতগতির জলযান জেডস্কি, স্পিডবোট, সমুদ্রের পানিতে গোসলে নামার টিউব, বালুচরে বসে সমুদ্র দর্শনের চেয়ার ছাতা (কিটকট) বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
কিটকট মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ঈদের দিন থেকে সৈকতে পর্যটকের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও সৈকত ভ্রমণে আসতে শুরু করেছেন। প্রচণ্ড গরমে তারা ছাতার ( কিটকট) নিচে বসে সাগর দেখছেন। এ জন্য ঈদের দিন সকাল থেকে এক হাজারের বেশি কিটকট বসানো হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে এ সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে যাবে। ঘণ্টায় ৩০ টাকা হিসাবে কিটকট ভাড়া দেওয়া হয়।
সৈকত এলাকায় বন্ধ দোকানপাটও খুলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে শামুক-ঝিনুকের তৈরি জিনিসপত্রের শতাধিক দোকান শনিবার সকাল থেকে খোলা।
পর্যটকের আকর্ষণ রামুর বৌদ্ধপল্লি। রামুর এক বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে রয়েছে ২০টির বেশি দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধবিহার। এর মধ্যে মেরংলোয়া এলাকায় দৃষ্টিনন্দন রামু কেন্দ্রীয় মহাসীমা বিহার, পাহাড়চূড়ার দেশের সর্ববৃহৎ ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, বৌদ্ধজাদি, ক্যাং, রাংকোট বনাশ্রম, তীর্থধাম, জগৎজ্যোতি শিশুসদন, আইসোলেটেড নারকেলবাগান, সম্রাট শাহ সুজা সড়ক অন্যতম।
শহর থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরে চকরিয়ার ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের প্রতিও পর্যটকদের আগ্রহ রয়েছে। ২০০১ সালের ১৯ জানুয়ারি ২ হাজার ২৫০ একর বনাঞ্চলে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম এই সাফারি পার্ক। বর্তমানে পার্কে জেব্রা, জলহস্তী, ময়ূর, অজগর, কুমির, হাতি, বাঘ, ভালুক, সিংহ, হরিণ, লামচিতা, শকুন, কচ্ছপ, রাজধনেশ, কাকধনেশ, ইগল, সাদা বক, রঙিলা বক, সারস, কাস্তেচরা, মথুরা, নিশিবক, কানিবক, বনগরুসহ ৫২ প্রজাতির ৩৪১টি প্রাণী আছে।
শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি। পল্লির অভ্যন্তরে আছে ৪০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক শাহেনশাহ গুহা। পাহাড়চূড়ার কবিটঙ, ঝুলন্ত সেতু পর্যটকের পছন্দ। সেখান থেকে আরও সাত কিলোমিটার গেলে দৃষ্টিনন্দন হিমছড়ি ঝরনাধারা। ঝরনার শীতল জলে শরীর ভিজিয়ে পাকা সিঁড়ি বেয়ে ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়চূড়ায় ওঠার ব্যবস্থাও আছে। পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের দিকে তাকালে মনে হবে বিশাল সাগর আপনার পায়ের নিচে। দরিয়ানগর ও হিমছড়ি সৈকতে রয়েছে আকাশে চক্কর মারার প্যারাসেইলিং। আকাশ থেকে নিচের পাহাড়সারি, সমুদ্র, বালুচরে লোকজনের দৌড়ঝাঁপ অপরূপ।
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে স্পিডবোটে মহেশখালীতে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট। সেখানকার মৈনাক পাহাড়চূড়ার আদিনাথ মন্দির, নিচে রাখাইনপল্লি, বৌদ্ধবিহার নজর কাড়ে।
টেকনাফ মডেল থানা প্রাঙ্গণে শতবছরের ঐতিহাসিক মাথিন কূপ। মগ জমিদারকন্যা মাথিনের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা ও সাহিত্যিক ধীরাজ ভট্টাচার্যের প্রেমকাহিনি নিয়ে এই কূপ। প্রতিবছর অন্তত ১০ লাখ মানুষ এই কূপ পরিদর্শন করেন।
এখান থেকে দুই কিলোমিটার পূর্ব দিকে গেলে নাফ নদী, তারপর মিয়ানমার সীমান্ত। নাফ নদীর পাড়ে নেটং (দেবতার পাহাড়) পাহাড়ে রয়েছে ঐতিহাসিক ব্রিটিশ বাংকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ সেনারা এই বাংকারে বসে মিয়ানমারে থাকা জাপান সেনাদের নজরদারি করত এবং কামানের গোলা ছুড়ত। নাফ নদীর মধ্যভাগে দৃষ্টিনন্দন জালিয়ার দ্বীপ, উল্টো দিকের পাহাড়ে এলিফ্যান্ট পয়েন্ট, বৌদ্ধমন্দির, পানের বরজ, নেচার পার্ক, হাতিখেদা, কুদুমগুহা মুহূর্তে মনকে পুলকিত করে তোলে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পর্যটকের অভিযোগ শোনার জন্য শহরের কলাতলী মোড়, সৈকতের সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে পৃথক তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি হোটেল ও গেস্টহাউসের কক্ষের অতিরিক্ত ভাড়া, রেস্তোরাঁসমূহে খাবারের দাম বেশি আদায় বন্ধে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে।
সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।
Tags: Cox's Bazar, sea beach, কক্সবাজার, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
For add