কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ভিড়

ঈদের প্রথম দিন শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ফাঁকাই ছিল। তাতে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বালুচরে শামুক-ঝিনুকে তৈরি রকমারি পণ্যের দোকান, কাপড়চোপড় ও শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিকেল পাঁচটার পর হঠাৎ দলে দলে লোকজন সৈকতে নামতে শুরু করেন। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ অন্তত ৩০ হাজার মানুষে ভরপুর হয় সৈকত। এরপর চাঙা হয়ে ওঠে ব্যবসা-বাণিজ্যও।

কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ঈদের প্রথম দিনে হোটেলে উঠেছেন ৮ হাজারের মতো পর্যটক। সন্ধ্যার আগে পর্যটকেরা হোটেল থেকে সৈকতে নামেন। একই সময় সৈকতে নেমেছেন আরও ২৫ হাজারের মতো স্থানীয় মানুষ। সব মিলিয়ে সৈকতে সন্ধ্যার দিকে ৩০ হাজারের মতো মানুষের সমাগম ঘটেছিল। আগামীকাল ঈদের দ্বিতীয় দিন সৈকতে সমবেত হবেন অন্তত ৭০ হাজার পর্যটক। এর সঙ্গে যুক্ত হবে স্থানীয় আরও ৫০ হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে লাখো মানুষে ভরপুর হবে সৈকতের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, এবারের ঈদের ছুটিসহ ১০ দিনে সৈকত ভ্রমণে আসবেন প্রায় ৮ লাখ পর্যটক। এর বিপরীতে ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, ৭ শতাধিক রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট নানা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা হবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার। গত বছর ঈদের ছুটির ১০ দিনে সৈকত ভ্রমণে আসেন প্রায় ১০ লাখ পর্যটক। এবার তীব্র দাবদাহ পরিস্থিতি বিরাজ করায় অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভ্রমণে বেরোতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্টের ৭৮ শতাংশ কক্ষ ইতিমধ্যে অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন রোববার হোটেলে উঠবেন অন্তত ৭০ হাজার পর্যটক। তৃতীয় দিন সোমবার এই সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

শনিবার বিকেল চারটার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে নেমে দেখা যায়, এক কিলোমিটারের এই সৈকত অনেকটা ফাঁকা। হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ বালুচরে বসানো ছাতা-চেয়ারে (কিটকটে) বসে সমুদ্র উপভোগ করছেন। উত্তর দিকে সুগন্ধা পয়েন্টের পরিস্থিতিও একই রকম ছিল।

শতাধিক পর্যটক তখন তীব্র দাবদাহ থেকে নিস্তার পেতে কিটকটে বসে ছিলেন। সমুদ্রে তখন ভাটা ছিল, বিধায় লোকজন পানিতেও নামতে পারছিলেন না। কিন্তু বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হঠাৎ লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। দলে দলে লোকজন সুগন্ধা পয়েন্ট, সি-গাল ও লাবণী পয়েন্ট দিয়ে সৈকতে নামতে থাকেন। সন্ধ্যা সাতটার সময় কলাতলী থেকে সুগন্ধা হয়ে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে অন্তত ৩০ হাজার মানুষে ভরপুর হয়ে ওঠে। এ সময় কয়েকজন বিদেশিকেও ঘুরতে দেখা যায়।

সৈকত ঘুরে দেখা যায়, পর্যটকদের অনেকে ভেজা বালুচরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। কেউ ঘোড়ার পিঠে এবং বিচ বাইকে চড়ে সৈকতের এদিক-ওদিক ছুটছেন। কেউ কেউ বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের গর্জন উপভোগ করছেন।

সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে একটি কিটকটে বসে ছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন (৩৯)। সঙ্গে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে। ৭ বছর বয়সী এক ছেলে ঘোড়ার পিঠে চড়ার বায়না ধরে। বাবা রাজি হলেও মায়ের নিষেধ—যদি পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলে। কিন্তু এমন কিছু হবে না বলে আশ্বস্ত করলেন ঘোড়ার চালক দিদার আলম। পরে ছেলেকে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠে এক চক্কর দিলেন বাবা।

আলতাফ হোসেন বলেন, ঈদের নামাজ শেষ করে তাঁরা প্রাইভেট কারে সীতাকুণ্ড থেকে কক্সবাজারের পথে রওনা দেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে কক্সবাজার পৌঁছে ওঠেন কলাতলী সৈকতের একটি রিসোর্টে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হোটেল থেকে তাঁরা নামেন সৈকতে। কিন্তু উন্মুক্ত সৈকতে তীব্র দাবদাহ জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে।

সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় ঢাকার উত্তরা থেকে আসা ঠিকাদার সাইফুল আলমের সঙ্গে। স্ত্রী, মা, দুই ছেলেসহ সাতজন নিয়ে তিনি উঠেছেন কলাতলীর একটি গেস্টহাউসে। সাইফুল আলম (৫৫) বলেন, ঈদের আগের দিন শুক্রবার ছুটি কাটাতে তাঁরা ঢাকা থেকে কক্সবাজার ছুটে আসেন। ৪০ শতাংশ ছাড়ে হোটেল কক্ষ পেলেও তার মনে হয়েছে ভাড়াটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। দুজন থাকার একটি এসি কক্ষের ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। এই কক্ষের ভাড়া বড়জোর ২ হাজার টাকা হতে পারে।

হোটেলমালিকেরা জানান, শনিবার বিকেল থেকে দূরদূরান্তের পর্যটকেরা কক্সবাজার পৌঁছাতে শুরু করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার পর্যটক হোটেলে উঠেছেন। রাতের মধ্যে আরও কয়েক হাজার পৌঁছাতে পারেন। ঈদের দ্বিতীয় দিন রোববার হোটেলে উঠবেন অন্তত ৭০ হাজার পর্যটক। তৃতীয় দিন সোমবার এই সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্টের ৭৮ শতাংশ কক্ষ ইতিমধ্যে অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।

পর্যটকেরা সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী, পাটোয়ারটেক, টেকনাফ সৈকত, রামুর বৌদ্ধপল্লি, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, সাগরদ্বীপ মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণে যাবেন। ইতিমধ্যে বিনোদনকেন্দ্রগুলো পরিপাটি করা হয়েছে।

হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, রোজার মাসে কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছিল। এখন সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজার।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। হোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের কক্ষভাড়া যাতে অতিরিক্ত হারে আদায় না হয় এবং রেস্তোরাঁগুলোর খাবারের দাম বেশি আদায় বন্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে। হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , , , , ,

oceantimesbd.com