ঈদের ছুটিতে ৫০ হাজার পর্যটকের আগমনে মুখর কুয়াকাটা সৈকত

পদ্মা সেতু চালুর পর বছরজুড়েই কমবেশি পর্যটকের আনাগোনা থাকে কুয়াকাটায়। তবে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে কুয়াকাটায় পর্যটক ও দর্শনার্থীর ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এবারের ঈদেও পর্যটক ও দর্শনার্থীর আগমনে জমজমাট হয়ে উঠেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা।

ঈদের প্রথম দিন থেকেই কুয়াকাটায় বিভিন্ন বয়সের মানুষ বেড়াতে আসতে শুরু করেন। তবে ওই দিন দূরদূরান্তের চেয়ে নিকটবর্তী এলাকার পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এরপর ঈদের দ্বিতীয় দিন আজ রোববার সকাল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকেরা কুয়াকাটা ভ্রমণে এসেছেন। এতে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বেশ খুশি।

ঈদের ছুটি উপভোগ করার জন্য কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা অধিকাংশ মানুষ লোনাপানিতে নেমে গোসলে ব্যস্ত। সকাল থেকে সৈকত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতের বালিয়ারিতে ফুটবল খেলে, সেলফি তুলে কিংবা হই-হুল্লোড় করে উপভোগ করছেন। অনেকে আবার ওয়াটার বাইক নিয়ে সমুদ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে আজ পর্যটক ও দর্শনার্থীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে এত মানুষের রাতযাপনের ব্যবস্থা কুয়াকাটায় নেই। এ কারণে অনেকেই সারা দিন ঘোরাঘুরি করে ফিরে যাবেন। কাল সোমবার অফিস খুললেও কুয়াকাটায় পর্যটকের চাপ আরও দু-এক দিন থাকবে বলে তিনি মনে করেন।

পর্যটক ও দর্শনার্থীর আগমনের কারণে দোকানদার, বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার, মোটরসাইকেলচালক, ভ্যানচালক, অটোরিকশাচালক, সৈকতের ছাতা-বেঞ্চ ব্যবসায়ী, ট্যুর অপারেটরসহ পর্যটনকেন্দ্রিক সব ব্যবসায়ী বেশ খুশি। রাখাইন মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দূরের মানুষ বেড়াতে এলে কেনাকাটা বেশি করেন। আর কাছের মানুষেরা তুলনামূলক কম কেনাকাটা করেন। ঈদের দ্বিতীয় দিন আমার বিক্রি ভালোই হয়েছে। সামনের কটা দিনও বেচাবিক্রি ভালো হবে।’

মোটরসাইকেলচালক আবদুর রহিম বলেন, ‘রোজার এক মাস বসেই ছিলাম। কোনো যাত্রী পাইনি। ঈদের ছুটির এ সময়ে যাত্রী টেনে কুলাতে পারছি না। নাওয়া-খাওয়ারও সময় পাই না। যাত্রী টেনে গত দুই দিনে আমি পাঁচ হাজার টাকা আয় করেছি।’

পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেল কুয়াকাটায় ভাজা মাছ বিক্রির দোকানগুলোতে। এসব দোকানে লবস্টার, রুপচাঁদা, কোরাল, তাইরা, টুনা, চিংড়ি, কাঁকড়া, ইলিশসহ বিভিন্ন মাছের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। মিজানুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিটি ভাজা মাছের দোকানে বিকেল চারটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত বিক্রি চলে। দোকানিদের একেকজন ৪০-৫০ হাজার টাকা প্রতিদিন বিক্রি করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

আজ দুপুরের পর থেকে কুয়াকাটা সৈকত ছিল লোকারণ্য। এ ছাড়া জাতীয় উদ্যান, লেম্বুর চর, গঙ্গামতী সৈকত, শুঁটকিপল্লি, ইলিশ পার্ক, মিশ্রিপাড়া রাখাইন বৌদ্ধমন্দির এবং রাখাইন মহিলা মার্কেট এলাকায়ও প্রচুর ভিড় ছিল। তবে সৈকতের দৈন্যদশা নিয়ে অনেক পর্যটক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমাদের দেশের অতি সুন্দর একটি জায়গা কুয়াকাটা। কিন্তু এখানকার দুরবস্থা দেখে হতাশ হয়ে যাই। কুয়াকাটা সৈকত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। তা ছাড়া সৈকতও ভেঙে ক্রমে ছোট হয়ে গেছে। সৈকত সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সাগরের তীব্র জোয়ারের কারণে সৈকত ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সৈকতকে সুরক্ষিত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কাজটি শুরু হলে কুয়াকাটা সৈকত ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

এ ছাড়া সৈকতের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য পর্যটকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানালেন ইউএনও জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, কুয়াকাটায় যাঁরা বেড়াতে আসেন, তাঁদের অনেকেই বিস্কুট, চিপসের প্যাকেট, ডাব খেয়ে খোসা ফেলেন সৈকতে। এ ছাড়া সৈকতের ভ্রাম্যমাণ দোকানদারেরা যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন। তবে এ বিষয়ে সব সময় সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

এদিকে ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ। তিনি বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সৈকত এবং হোটেল-মোটেল এলাকায় কয়েক ভাগে করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের ছয়টি দল এ জন্য কাজ করছে। এ ছাড়া যাঁরা সাগরে গোসল করার জন্য নামছেন, তাঁদের মাইকিং করে প্রতিমুহূর্তে সতর্ক করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর ওশানটাইমস.কম গুগল নিউজ চ্যানেলে।

Tags: , ,

oceantimesbd.com